ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত কিছুদিন আগেই এক ছবির প্রিমিয়ারে জানিয়েছিলেন এবার তাঁর প্রযোজিত কাজে দেখা যাবে শ্রীময়ী চট্টরাজকে। শ্রীময়ীর সঙ্গে খুবই মধুর সম্পর্ক অভিনেত্রীর। ঋতুপর্ণার প্রায় সব ছবির প্রিমিয়ারে, ট্রেলার লঞ্চে দেখা মেলে তাঁর। সে রকমই ওই ছবির প্রিমিয়ারে শ্রীময়ীকে দেখা গিয়েছিল। তাঁকে বহুদিন পর্দায় সেভাবে পাননি দর্শকরা। তাই নায়িকার থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আবার কবে তাঁকে পর্দায় দেখা যাবে।
তখন শ্রীময়ীকে বলতে শোনা যায় 'যেদিন প্রযোজক, পরিচালকরা নেবেন সেদিন দেখতে পাবেন।’ এর পরই পাশ থেকে ঋতুপর্ণা জানিয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে এবার কাজ করবেন শ্রীময়ী। এবার সেই কথাই রাখলেন ঋতুপর্ণা। দুর্গাপুজো স্পেশাল একটি তাঁর সঙ্গে এবার দেখা যাবে কাঞ্চন-পত্নীকে। শ্রীময়ী অভিনেত্রীর সঙ্গে ছবি ভাগ করে অনুরাগীদের সেই সুখবর দিলেন।
আরও পড়ুন: সোমবার বিরাট আয় কমল ‘ওয়ার ২’-এর! পঞ্চম দিনে হৃতিক-জুনিয়র এনটিআর-এর ছবি কত কোটি ঘরে তুলল?
সোমবার রাতে শ্রীময়ী একটি পোস্ট করেন। সেখানে লাল পাড় সাদা শড়ি সঙ্গে ভারী ভারী গয়নায় একেবারে আটপৌড়ে বাঙালিআনা ধরা দেন ঋতুপর্ণা। অন্যদিকে, শাড়ি, ভারী গয়না আর মারাঠি নথে নজর কাড়েন শ্রীময়ী। অভিনেত্রীর সঙ্গে এই লুকে একাধিক ছবি শেয়ার করেন শ্রীময়ী, সঙ্গে দেখা মেলে চৈতি ঘোষালের। ছবিগুলি শেয়ার করে শ্রীময়ী ক্যাপশনে লেখেন, ‘নিউইয়র্কে টাইমস্কোয়ারে দুর্গাপুজো। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর প্রযোজনায়, ফালাকদার পরিচালনায় হই হই করে, একটা ফাটাফাটি পুজোর গানে শ্যুটিং করলাম। আমি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। এখন চারপাশে দেখা যায় মানুষ অল্প দিনে কাজ করে, নিজেদের নিয়ে নানা রকম কত বড় বড় কথাবার্তা বলে, ফ্যান্টাসিতে থাকে, স্টারডাম দেখায়, নিজেদেরকে স্টার ভাবতে শুরু করে, নিজের পিঠ নিজেই চাপড়ায়।'
কাঞ্চন-ঘরণীর কথায়, ‘এখনকার দিনে স্টারদের দেখি সব রেডি করে ডাকতে হয়। আমাদের যখন শ্যুটিং চলছিল তখন আমি, চৈতি দি, সঙ্গশ্রী দি ছিলাম সেটে। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে দেখলাম পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে আমাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা করে কীভাবে শট নেওয়া যায়, ওঁর সঙ্গে কীভাবে শট নেওয়া হবে সবটা বুঝিয়ে দিচ্ছেন। আমি সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম। আমি ভাবলাম একজন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেত্রী, এত বড় স্টার, মেগা স্টার, তাঁর ঝুলিতে এত ব্লকবাস্টার হিট সিনেমা। তার তো ফ্লোরে এসে নিজের শট দিয়ে চলে যাওয়ার কথা। একটা মিউজিক অ্যালবামের মুখ্য চরিত্র তো তিনি। কিন্তু দেখলাম ফ্লোরে বসে প্রত্যেকের শট নিয়ে ভাবা, পুরো গানটার থিম ক্রিয়েট করে, সবাইকে আলাদা আলাদা সুযোগ দিয়ে, সবার প্যাক আপ করে দিলেন, আর সব শেষে নিজে শট দিলেন। আমাদের বললেন, ‘তোদের তো pack up, ভ্যানে বস, আমি শট দিয়ে আসছি।’
আরও পড়ুন: ৪ দিনে ১০ কোটি পার 'ধূমকেতু'র! ‘দেশু’ ঝড়ে তোলপাড় বাংলার বক্স অফিস
তিনি আরও বলেন, 'অন্যান্য হিরোইনরা, নিজেদের কস্টিউম, মেকআপ, হেয়ার সবটা একটু আলাদা রাখতে চায় অন্যান্য কলাকুশলীর থেকে। আমি ঋতুদিকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম, তিনি নিজে আমার লুক, আমার কস্টিউম, সবটা নিয়ে এত প্রশংসা করলেন, বারে বারে সবাইকে বললেন, 'কি সুন্দরী লাগছে শ্রীময়ীকে দেখো।'
এরপর শ্রীময়ী ঋতুপর্ণার থেকে কাজের অফার পাওয়ার প্রসঙ্গে লেখেন, ‘আমি ঋতুদির সঙ্গে প্রথম কাজ করছি। অন্য সময় আড্ডা মেরেছি, মনের কথা শেয়ার করেছি। আমাকে যখন ঋতুদি কাজের অফারটা করেন, আমি তখন খুব টেনশনে ছিলাম। আমি ভেবেছিলাম ঋতুদি ফ্লোর কেমন হবে। সত্যি কথা, আমার ভয় লাগছিল, কারণ আমি বাড়িতে একরকম দেখেছি, আমি কাঞ্চনের মুখে শুনেছি, ঋতুদি on floor very much professional.... আর ঋতুদির অভিনয় নিয়ে কথা বলার সাহস আমার নেই, কী ভয়ংকর অভিনেত্রী তা ঋতুদির সিনেমাগুলো দেখলেই বোঝা যায়। সেই ভয় নিয়েই শ্যুটিং- এ পৌঁছলাম। মেকআপ ভ্যানে বসে যখন রেডি হচ্ছি, লাঞ্চটাইমে ঋতুদির ছায়াসঙ্গিনী পিয়ালী এল। দেখলাম একটা প্লেটে আমার জন্য ভাত, ইলিশ মাছ, ভেটকি মাছ, আলু ভাজা, আলু সেদ্ধ সুন্দর করে সাজিয়ে বলল ঋতুদি তোমার জন্য পাঠিয়েছে। আমি প্রথমেই অবাক হয়ে গেলাম। ঋতুদির আগের দিন ১০২ জ্বর ছিল, গলা ব্যথা ,গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছিল না। সেই অসুস্থতা নিয়ে আমাদের কলটাইমের অনেক আগে পৌঁছে সকাল থেকে শ্যুটিং করছেন, তার ওপর অতগুলো চেঞ্জ।’
শ্রীময়ীর কথায়, ‘অনেক হয়তো বলবেন নিজের প্রোডাকশন বলে, কিন্তু না বিশ্বাস করুন, নিজের প্রোডাকশন বলে, আমাকে নিজের খাবার থেকে খাবার শেয়ার নাও করতে পারতেন। নিজের স্টারডাম টা ভুলে, প্রত্যেকটা কলাকুশলী কে সুবিধা দিতে এবং ফ্লোরে সেই সম্মান দিতে অনেক বড় মনের দরকার হয়। আমি ঋতুদিকে বাড়িতে যা দেখেছি, ফ্লোরেও তাই দেখলাম। ঋতুদির মধ্যে কোনও ইনসিকিউরিটি নেই, কোনও জটিলতা নেই, মনটা খুব স্বচ্ছ। তাই হয়তো ঋতুদি আজও এত সফল। তিনি এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন, স্টার, সুপারস্টার মেগা স্টার ব্লকবাস্টার, সবকিছুর আগে ভালো মনের মানুষ হওয়া জরুরী। ওঁর শিক্ষা, সহবত,পড়াশোনা এটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন, মানুষকে যদি ভালোবেসে আপন করে নেওয়া যায়, তাহলে মানুষের জীবনেও তোমার গ্রহণযোগ্যতা এমনি এমনি আসবে, তার জন্য আলাদা করে কিছু করতে হবে না। তাই হয়তো ঋতু দি আজও বাংলা সিনেমার ইন্ডাস্ট্রি হয়েও, একজন প্রচার বিমুখ মানুষ।'