বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পদদলনের ঘটনায় কর্ণাটক সরকার হাই কোর্টে রিপোর্ট পেশ করেছে। এই ঘটনায় ১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৫০-এর বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। রিপোর্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB) ফ্র্যাঞ্চাইজির তরফে গুরুতর অব্যবস্থা ও অনুমতি ছাড়াই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল।
কর্ণাটক সরকার জানিয়েছে, জুন ৩ তারিখে অনুষ্ঠিত হওয়া বিজয় শোভাযাত্রা (Victory Parade)-র জন্য ইভেন্ট আয়োজক সংস্থা DNA কোনও আনুষ্ঠানিক অনুমতি নেয়নি। কেবল পুলিশকে জানানো হয়, অথচ ২০০৯ সালের সিটি অর্ডার অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক অনুমতি বাধ্যতামূলক ছিল। সেই কারণে বেঙ্গালুরু পুলিশ অনুমতি দেয়নি।
কিন্তু পুলিশের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও RCB সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চালিয়ে যায়। ৪ জুন সকাল ৭:০১ টায় RCB-র অফিসিয়াল হ্যান্ডল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় (ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, এক্স) একটি পোস্ট করে জানানো হয় যে, বিজয় শোভাযাত্রায় বিনা পাসেই অংশ নেওয়া যাবে। শোভাযাত্রা শুরু হবে বিধানসৌধ থেকে এবং শেষ হবে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে।
এরপর, সকাল ৮টায় আরেকটি পোস্টে একই কথা পুনরায় জানানো হয়। সকাল ৮:৫৫-তে RCB তাদের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডলে (প্রাক্তন টুইটার) একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে, যেখানে বিরাট কোহলি বলেন যে, ‘আমরা বেঙ্গালুরু শহরের মানুষ ও RCB ফ্যানদের সঙ্গে এই জয় উদযাপন করতে চাই ৪ জুন, বেঙ্গালুরুতে।’
বিকেল ৩:১৪ মিনিটে করা চতুর্থ পোস্টে জানানো হয় যে, বিকেল ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত শোভাযাত্রা হবে এবং এরপর স্টেডিয়ামে উদযাপন চলবে। এই পোস্টেই প্রথম ও একমাত্রবার জানানো হয় যে সীমিত ফ্রি পাস পাওয়া যাবে shop.royalchallengers.com-এ। কিন্তু তার আগের সমস্ত পোস্ট দেখে সাধারণ মানুষ ভেবেছিলো, উৎসব সকলের জন্য উন্মুক্ত। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, RCB-র এই পোস্টগুলো ব্যাপক সাড়া ফেলে।
প্রথম পোস্ট: প্রায় ১৬ লক্ষ ভিউ
দ্বিতীয় পোস্ট: প্রায় ৪.২৬ লক্ষ ভিউ
তৃতীয় পোস্ট (কোহলির ভিডিও): প্রায় ৭.৬ লক্ষ ভিউ
চতুর্থ পোস্ট: প্রায় ১৭ লক্ষ ভিউ
এই প্রচারের জেরে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ স্টেডিয়ামের বাইরে ভিড় করেন।
উদ্বেগজনকভাবে, ভিড় নিয়ন্ত্রণের কোনও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। বিকেল ৩:১৪-এর পর যখন হঠাৎ করে জানানো হয় যে স্টেডিয়ামে ঢুকতে হলে পাস লাগবে, তখন আগের বার্তাগুলোর বিপরীতে এই ঘোষণায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। বিশাল জনসমাগম, অব্যবস্থা, ও গেট খোলায় দেরির ফলে ঘটে পদদলনের ঘটনা। পুলিশ কর্মীসহ বহু মানুষ আহত হন।
প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে — RCB, DNA ও কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (KSCA) পরস্পরের মধ্যে কোনও সমন্বয় করেনি। পরে পুলিশ নিয়ন্ত্রিতভাবে সীমিত আকারে অনুষ্ঠান চালাতে দেয়, যাতে জনরোষ না বাড়ে। ৪ জুনের ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু ও ৩০ জনের বেশি আহত হন। এর জেরে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে —
ম্যাজিস্ট্রিয়াল ও জুডিশিয়াল তদন্ত, FIR দায়ের, পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিবকে বরখাস্ত, স্টেট ইন্টেলিজেন্স প্রধানকে বদলি, প্রত্যেক মৃতের পরিবারকে প্রথমে ১০ লক্ষ টাকা, পরে বাড়িয়ে ২৫ লাখ ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়।
৫ জুন কাব্বন পার্ক থানার শীর্ষ পুলিশ আধিকারিকদের বরখাস্ত করা হয় এবং হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে এক সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। এই ঘটনায় বিরাট কোহলির ভিডিয়ো নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে, কারণ সেটি প্রচারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল বলে মত দিচ্ছে সরকার।