প্রতিবার আইপিএলে কোনও তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার উঠে এলে তাকে নিয়ে আগ্রহ বাড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি, বিসিসিআই এবং নির্বাচক কমিটির মধ্যেও। তবে বৈভব সূর্যবংশী একেবারেই অন্যরকম। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই তাকে ভবিষ্যতের বড় তারকা হিসেবে দেখা হচ্ছে। স্বপ্ন পূরণ করতে হলে অবশ্য তাকে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৯, ভারত ‘এ’ দলে নিজেকে প্রমাণ করে তারপরই সিনিয়র জাতীয় দলে ঢোকার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
তবে সূর্যবংশী তার যাত্রার শুরুটা চমকপ্রদভাবে করেছেন। আইপিএল ২০২৫-এর মেগা-নিলামে রাজস্থান রয়্যালস তাকে দলে নেওয়ার পর, প্রথম বলেই ছক্কা মেরে শুরু করেন, আর পরের ম্যাচেই ইতিহাস সৃষ্টি করেন। গুজরাট টাইটান্সের বিরুদ্ধে মাত্র ৩৬ বলে ১০১ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে আইপিএলের ইতিহাসে কনিষ্ঠতম সেঞ্চুরিয়ান হন তিনি। এরপর থেকেই তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। শুধু ভারতে নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন বৈভব। ইংল্যান্ড যাওয়ার আগে ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন।
অস্ট্রেলিয়া থেকে ইংল্যান্ড—সব জায়গার ক্রিকেটাররাই এখন বৈভব সূর্যবংশীর নাম জানেন। তিনি বর্তমানে ইউকে-তে ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে অনুশীলন করছেন। সেখানেও তাঁর আইপিএলের ফর্ম বজায় রয়েছে—সম্প্রতি একটি ম্যাচে ৯০ বলে ১৯০ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেন। তবে আইপিএলে সাফল্যের পর তার ওজন কিছুটা বেড়ে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যখন তার প্রিয় খাবার বিহারের ‘লিট্টি-চোখা’ খাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন তাঁর বাবা সঞ্জীব সূর্যবংশী জানান, এখন ছেলেকে নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসে রাখা হয়েছে।
দৈনিক জাগরণ-কে বৈভব সূর্যবংশীর বাবা সঞ্জীব সূর্যবংশী বলেন, ‘না, এখন আর খায় না। ও এখন খুব ব্যালান্সড ডায়েট ফলো করে। জিমেও যায়। আইপিএলের পর ওজন অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল, সেটা কমাতে হবে।’
রাহুল দ্রাবিড়ের অঙ্গীকার: ভারতীয় দলে খেলবে বৈভব
আইপিএল থেকে বিদায় নেওয়ার সময় বৈভবের সঙ্গে দেখা হয়েছিল রাজস্থান রয়্যালস কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের। সেই সময় দ্রাবিড় ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটছিলেন, তবু বৈভবের সেঞ্চুরির আনন্দে হুইলচেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠেছিলেন ‘দ্য ওয়াল’। দু’জনের মধ্যে একটা আবেগঘন আলাপচারিতা হয়েছিল, যেখানে দ্রাবিড় বৈভবকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন—এটা কেবল শুরু, সামনে আরও কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে, যখন প্রতিপক্ষরা তার খেলার ধরন বুঝে ফেলবে।
তবে এখানেই শেষ নয়। বৈভবের বাবা সঞ্জীব জানিয়েছেন, দ্রাবিড় নিজে তাকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, ছেলেকে নিয়ে এখন আর চিন্তা করার দরকার নেই, কারণ এখন থেকে সে তাঁদের পরিবারের অংশ। তাঁরা নিজে হাতে বৈভবকে গড়ে তুলবেন।
সঞ্জীব সূর্যবংশী বলেন, ‘রাহুল স্যার বলেছিলেন—আপনার কাজ শেষ, এখন ও আমাদের দায়িত্ব। আমরা ওকে দেখে রাখব। শুধু খেয়াল রাখবেন, ও যেন মোবাইল আর ইন্টারনেট মিডিয়া থেকে দূরে থাকে। আমরা ওকে এমন একজন খেলোয়াড় বানাব, যে দেশের হয়ে খেলতে পারবে।’