স্কলারশিপ না মেলায় অনশনে বসলেন গবেষক অর্ণব দাম। শুক্রবার থেকে বর্ধমান জেলা সংশোধনাগারে অনশন শুরু করেছেন তিনি। বিষয়টি ঘিরে আলোড়ন ছড়িয়েছে শিক্ষা মহল থেকে রাজনৈতিক পরিসরেও। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানিয়েছেন, স্কলারশিপ প্রদানের ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে নেই। সেটা রাজ্য সরকারের নীতি অনুসারে হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাঁরা কেবল নাম সুপারিশ করতে পারেন। তবে অর্ণবকে কিছুটা স্বস্তি দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: টানা অনশনে দুর্বল, ওজন কমেছে মাওবাদী নেতা অর্ণবের, বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস
জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই অর্ণবের রেজিস্ট্রেশন ফি ১০ হাজার টাকা মকুব করা হয়েছে। লাইব্রেরি থেকে বই পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। থিসিস জমা দেওয়ার সময় যে ফি দিতে হয়, সেটিও মকুব করার আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠকে তাঁকে একটি ল্যাপটপ দেওয়ার প্রস্তাবও গৃহীত হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, এপিডিআরের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর অভিযোগ করেছেন, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষকদের জন্য দুটি স্কলারশিপ রয়েছে নন-নেট বিবেকানন্দ স্কলারশিপ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্কলারশিপ। অথচ অর্ণবকে কোনওটিই দেওয়া হয়নি। তাঁর বক্তব্য, সমস্ত পরীক্ষায় প্রথম হওয়া সত্ত্বেও অর্ণবের স্কলারশিপ পাওয়ার কথা ছিল। তিনি আরও মনে করিয়ে দেন, রাজনৈতিক বন্দি অবস্থায় থেকেই অর্ণব দাম বিএ, এমএ-তে ৭০-৭৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন, স্টেট এলিজিবিলিটি টেস্টে (সেট) উত্তীর্ণ হয়েছেন, কিন্তু পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় নেট পরীক্ষায় বসতে পারেননি। বর্তমানে তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে পিএইচডি করছেন এবং প্রথম সেমেস্টারের কোর্সওয়ার্ক পরীক্ষাতেও প্রথম হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকও স্বীকার করেছেন, অর্ণব পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী। তিনি জানান, শুক্রবার জেলা সংশোধনাগারের সুপারিন্টেন্ডেন্ট তাঁকে ই-মেইল করে অর্ণবের অনশন শুরুর খবর জানিয়েছেন। যদিও জেল সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। উল্লেখযোগ্য বিষয়, অর্ণব দাম একসময় খড়গপুর আইআইটির ছাত্র ছিলেন। পড়াশোনা ছেড়ে মাওবাদী সংগঠনে যোগ দেন তিনি। ২০১০ সালে পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলায় ২৪ জন জওয়ান নিহত হওয়ার ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে নেতৃত্ব দেওয়ার। আরও একাধিক মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১২ সালে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে এবং পরে আদালত তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। বন্দি অবস্থাতেই তিনি ফের পড়াশোনার জগতে ফিরে আসেন। ইগনু থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ফার্স্ট ক্লাসে। ২০১৮ সালে স্টেট লেভেল এলিজিবিলিটি টেস্টেও সফল হন। ২০২৩ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রবেশিকায় ২৪৯ জন প্রতিযোগীকে পিছনে ফেলে প্রথম হন তিনি। বর্তমানে তিনি জেলেই গবেষণার কাজ চালাচ্ছেন।