কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের অনুদান পাওয়ার অন্যতম প্রধান শর্তই হল প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব অর্থ কমিশনের রিপোর্ট বিধানসভায় পেশ করা। সেই নিয়ম মানেনি পশ্চিমবঙ্গ, এই অভিযোগ তুলেই চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে অর্থ কমিশনের তহবিল থেকে টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। বুধবার সংসদে এ বিষয়ে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েতিরাজ মন্ত্রী রাজীব রঞ্জন সিং। তাঁর কথায়, রাজ্যের ষষ্ঠ অর্থ কমিশনের রিপোর্ট বিধানসভায় পেশ না হওয়াতেই অর্থ কমিশনের শর্ত পূরণ হয়নি, তাই রাজ্য এই অর্থ বরাদ্দের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। এই অবস্থায় হাল ছাড়েনি রাজ্য প্রশাসন। বিধানসভায় রিপোর্ট জমা দেওয়ার কাজ শেষ করেই দ্রুত উদ্যোগ নিয়েছে পঞ্চায়েত দফতর। সেই রিপোর্ট হাতে নিয়ে রাজ্যের পদস্থ আধিকারিকদের একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: জয়েন্ট বিডিওদের বদলি সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতে নতুন নীতি, ঘোষণা রাজ্য সরকারের
অভিযোগ রিপোর্ট পেশ না হওয়ার ফলে, ১০০ দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা কিংবা গ্রামীণ সড়ক প্রকল্পের মতো কেন্দ্রীয় স্কিমের পর এবার পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের অনুদানেও কোপ বসেছে। তবে রাজ্যের বক্তব্য, কেন্দ্রের দেওয়া প্রতিটি শর্ত মানা হয়েছে তা সরাসরি জানানো এবং চলতি অর্থবর্ষের আটকে থাকা প্রথম কিস্তির ১৩০০ কোটি টাকা দ্রুত ছাড়ার দাবি জানানো।
সূত্রের খবর, চলতি বছরের জুলাই মাসে যখন রাজ্য অর্থ কমিশনের টাকা দাবি করে কেন্দ্রকে চিঠি পাঠিয়েছিল, তখনই পাল্টা জবাবে নয়াদিল্লি স্পষ্ট জানায় যে ষষ্ঠ অর্থ কমিশনের রিপোর্ট বিধানসভায় না জমা হলে অনুদান মঞ্জুর হবে না। রাজ্যের খোঁজখবরেই জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরেই ষষ্ঠ অর্থ কমিশন গঠিত হয়েছিল এবং তার রিপোর্ট অর্থ দফতরের কাছে জমাও পড়ে। তবে বিধানসভায় তা পেশের কাজ আটকে থাকাতেই সমস্যার সূত্রপাত। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া মিটিয়ে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। আর এই ‘কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট’ নিয়েই কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে গিয়েছেন রাজ্যের প্রতিনিধি দল।
এ বিষয়ে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার মন্তব্য করেছেন, সামান্য কারণে পশ্চিমবঙ্গকে হেনস্তার ঘটনা নতুন নয়। অন্যান্য ‘ডাবল ইঞ্জিন’ রাজ্যে হাজার গলদ থাকলেও তাদের টাকা আটকানো হয় না। তবে রাজ্য সরকার সমস্ত নিয়ম মেনেছে। সেই বিষয়টি কেন্দ্রকে জানাতে গিয়েছে রাজ্যের প্রতিনিধি দল।
একই দিনে পঞ্চায়েত সচিব পি. উলগানাথন রাজ্যের বিভিন্ন জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসকদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। সেখানে নির্দেশ দেওয়া হয়, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের আওতায় যেসব কাজ বাকি রয়েছে, তা দ্রুত শেষ করতে হবে। পাশাপাশি আগামী প্রকল্পগুলির জন্য দরপত্র ডাকার কাজও এগিয়ে রাখতে হবে, যাতে কেন্দ্রের শর্ত পূরণ হওয়া মাত্রই কাজ শুরু করা যায়। প্রশাসনিক মহলের মতে, এর অর্থই হচ্ছে রাজ্য আশাবাদী যে শর্ত পূরণের পর অর্থবর্ষের অনুদান ছাড়তে রাজি হবে কেন্দ্র।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অসমাপ্ত কাজ দ্রুত শেষ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। যেসব বাড়ি সম্পূর্ণ হয়েছে, সেগুলির তথ্য পোর্টালে আপলোড করতে বলা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে প্রায় ১৬ লক্ষ আবেদনকারী যাঁরা প্রথম কিস্তির টাকা পাবেন, তাঁদের যাচাইয়ের প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত করতে নির্দেশ গিয়েছে।