বলিউডের ‘শো-ম্যান’ রাজ কাপুরের সঙ্গে একই দিনে জন্ম! হয়ত নেহাতই কাকতালীয় ঘটনা। তবে রাজ কাপুর পরবর্তীযুগে বলিউডের ‘অপর শো-ম্যান’ নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন শ্যাম বেনেগাল। বছর শেষ হওয়ার আগে সকলকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন ‘অঙ্কুর’, ‘নিশান্ত’-এর মতো ছবির পরিচালক। চলতি মাসের শুরুতেই ৯০তম জন্মদিন পালন করেছিলেন বর্ষীয়ান পরিচালক।
শ্যাম বেনেগালের মৃ্ত্যুর খবর ইন্ডিয়া টুডে-কে নিশ্চিত করেছেন তাঁর একমাত্র কন্যা পিয়া বেনেগাল। দীর্ঘদিন ধরেই কিডনি সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছিলেন ফিল্মমেকার। সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে উদয় হয় এই নক্ষত্রের। প্রথম ছবিতেই ফিল্মবোদ্ধাদের চমকে দিয়েছিলেন তিনি।
যদিও পেশাদার জগতে তিনি প্রবেশ করে এক বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজের সুবাদে। ১৯৩৪ সালের ১৪ই ডিসেম্বর হায়দরাবাদের কোঙ্কণী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম শ্যাম বেনেগালের। বাবা ছিলেন আলোকচিত্রশিল্পী, ছোট থেকেই তাই সংবাদমাধ্যম টানত শ্যাম বেনেগালকে। ১৯৫৯ সালে এক অ্যাড এজেন্সিতে যোগ দেন। এরপর ১৯৬২ সালে তৈরি করেন প্রথম তথ্যচিত্র, যা ছিল গুজরাতি ভাষায় তৈর ‘ঘের ব্যায়টা গঙ্গা’।
হিন্দি সিনেমার জগতে অন্য ধারার ছবি তৈরিতে জোয়ার এনেছিলেন শ্যাম বেনেগাল। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম ছবি অঙ্কুর। বিনোদন নয়, তাঁর চলচ্চিত্রগুলিতে সমাজের কঠিন বাস্তবতা চিহ্নিত হয়েছিল। ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে ভারতীয় সমান্তরাল চলচ্চিত্র আন্দোলনের অন্যত প্রাণপুরুষ ছিলেন তিনি। ভূমিকা: দ্য রোল (১৯৭৭), জুনুন (১৯৭৮), আরোহন (১৯৮২), নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু: দ্য ফরগটেন হিরো (২০০৪), মন্থন (১৯৭৬), এবং ওয়েল ডান আব্বা (২০১০) সহ একাধিক চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কার জিতেছেন।
ওয়েল ডান আব্বা (২০১০)-র পর দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ছবির জগত থেকে বিরতি নিয়েছিলেন তিনি। তবে চলচ্চিত্র ভাবনা কোনওদিন তাঁর পিছু ছাড়েনি। সেই কারণেই ৯০-এর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক তৈরি করেন শ্যাম বেনেগাল। গত বছরই মুক্তি পেয়েছিল তাঁর শেষ ছবি ‘মুজিব: দ্য মেকিং অব আ নেশন’ (বাংলায় মুজিব একটি জাতির রূপকার)।
চলতি মাসে জন্মদনের আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা সবাই বুড়ো হয়ে যাই। জন্মদিনে আমি ভালো কিছু করি না। এটি একটি বিশেষ দিন হতে পারে তবে আমি এটি নির্দিষ্টভাবে উদযাপন করি না। আমি আমার দলের সাথে অফিসে একটি কেক কাটলাম। দুই থেকে তিনটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি; তারা সবাই একে অপরের থেকে আলাদা। কোনটা বানাবো বলা মুশকিল। এগুলো সবই বড় পর্দার জন্য।’ না, সেই কাজ আর এগোল না। না-ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন শ্যাম বেনেগাল।
চলতি বছরের শুরুতে কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় চলচ্চিত্র নির্মাতার অন্যতম বিখ্যাত কাজ 'মন্থন'। নাসিরুদ্দিন শাহ এবং প্রয়াত অভিনেতা স্মিতা পাতিল অভিনীত এই ছবি ভারতীয় সিনেমার এক সম্পদ। চলচ্চিত্রটি ১৯৭৭ সালে দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছিল। শ্যাম বেনেগালের মৃত্যুতে শোকের ছায়া বলিউডে। ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক অপূরণীয় ক্ষতি, তাঁর প্রয়াণ।