সচিন তেন্ডুলকর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ভিভ স্যার আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘তোমার মধ্যে এখনও অনেক ক্রিকেট বাকি আছে।’ সেই কথোপকথনের পরই সব বদলে গিয়েছিল।’ অনেকেই মনে করছেন সচিন তেন্ডুলকর, ভিভ রিচার্ডস অথবা এবি ডি'ভিলিয়ার্সের কথায় অবসর না নেওয়ার কথা ভাবতে পারেন বিরাট কোহলি।
১৮ বছর পরে কি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে (ছবি- এক্স)
মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে রোহিত শর্মা টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন, ক্রিকেট জগত এখনও সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আর এখন বিরাট কোহলি? ভারত কি একসঙ্গে দুইজন টেস্ট অধিনায়ককে হারাতে পারে? বিশেষ করে ইংল্যান্ডে পাঁচ টেস্টের দীর্ঘ ও কঠিন সফরের আগে।
অবসর সব সময়ই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। প্রতিটি ক্রীড়াবিদ জানেন কখন থামা উচিত। যদি কোহলি সত্যিই বিসিসিআই-কে জানিয়েছেন যে তিনি টেস্ট কেরিয়ারের ইতি টানতে চান, তাহলে তা সম্মানের সঙ্গেই মেনে নিতে হবে। কিন্তু প্রশ্নটা থেকেই যায়, ‘এখন কেন, বিরাট?’ বিশেষ করে যখন তিনি সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া সফরের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর কিছুটা ছন্দে ফিরেছেন।
পার্থ টেস্টের পরে কী ঘটেছিল?
পার্থে প্রথম টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে শতরান করে মনে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ের প্রতি তার ভালোবাসা এখনও অটুট। কিন্তু সেটা ছিল ভ্রান্ত আশা। ওই ইনিংসে অপরাজিত শতরান করলেও সিরিজে মোটে ১৯০ রান করতে পেরেছেন ৯ ইনিংসে, গড় ২৩.৭৫। আটবারই আউট হয়েছেন অফ-স্টাম্পের বাইরের বলে উইকেটকিপার বা স্লিপে ক্যাচ দিয়ে। কিন্তু রান না এলেও তার খিদে, পরিশ্রম, দৃঢ়তা এবং প্রায় মরিয়া মনোভাব স্পষ্ট ছিল।
নেটে সকলের আগে পৌঁছে অনুশীলনে সময় কাটাতেন কোহলি। যদিও ম্যাচে সেই অনুশীলনের ফলাফল চোখে পড়েনি। শোনা যাচ্ছে, সিরিজ শেষে কোহলি সতীর্থদের বলেছিলেন, ‘আমি শেষ’—তবে সেটা কেউ ততটা গুরুত্ব দেয়নি। কারণ তখন তার আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুটি ম্যাচ জিতে এবং আইপিএল ২০২৫-এ দুর্দান্ত ফর্মে থাকায় মনে হয়েছিল কোহলি এখনও আগের মতোই আগুন ঝরাতে পারেন।
জীবনের সব ভালো জিনিসেরই শেষ আছে। হয়তো এখন না হলেও, শিগগিরই কোহলি টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেবেন। তবে তাঁকে আবারও ভাবতে অনুরোধ করা কি যুক্তিসঙ্গত নয়? বিসিসিআই নাকি তাই চেয়েছে। আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। যেমন ২০১২ সালের অগস্টে যখন ভিভিএস লক্ষ্মণ নিউজিল্যান্ড সিরিজের দলে নাম ওঠার পর টেস্ট থেকে অবসর নেন। রাহুল দ্রাবিড়ও কয়েক মাস আগেই অস্ট্রেলিয়া সফরের পর অবসর নিয়েছিলেন। লক্ষ্মণকে অনুরোধ করেছিল বিসিসিআই, তৎকালীন সভাপতি এন. শ্রীনিবাসন ও নির্বাচক প্রধান কৃষ্ণমাচারী শ্রীকান্ত – কিন্তু সিদ্ধান্ত বদলাননি লক্ষ্মণ।
এবার দেখার বিষয়, কোহলি লক্ষ্মণের পথ অনুসরণ করবেন নাকি সিদ্ধান্ত বদলাবেন – ধরেই নেওয়া হলে যে তিনি অবসর নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। হয়তো, একটিবার ফোন যদি আসে সচিন তেন্ডুলকর থেকে? কারণ তেন্ডুলকরই তো কোহলির সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
সচিনের সঙ্গে কী ঘটেছিল?
সচিন নিজেও একবার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন – ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেওয়ার পর, যখান তেন্ডুলকর মাত্র ৬৪ রান করেছিলেন। মনোবল ভেঙে পড়েছিল, দলের মধ্যে আস্থা কমে গিয়েছিল। সেই সময়ে অবসরের কথা ভেবেছিলেন সচিন। ঠিক তখনই ফোন এসেছিল কিংবদন্তি ভিভ রিচার্ডসের কাছ থেকে।
সচিন তেন্ডুলকর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ভিভ স্যার আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘তোমার মধ্যে এখনও অনেক ক্রিকেট বাকি আছে।’ প্রায় ৪৫ মিনিট কথা বলি। আমার ব্যাটিং হিরো যখন ফোন করেন, তখন সেটা খুব আবেগের মুহূর্ত। সেই কথোপকথনের পরই সব বদলে গিয়েছিল।’