ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে লণ্ডভণ্ড হিমাচল প্রদেশ।আর সেই গুরুতর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার হিমাচল প্রদেশ সফরে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মাণ্ডি ও কুলু জেলার বিপর্যস্ত এলাকাগুলি আকাশপথে পরিদর্শনের পর তিনি কাংড়ায় পৌঁছন।একইসঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্ত হিমাচল প্রদেশের জন্য ১,৫০০ কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হিমাচল প্রদেশের বন্যা-কবলিত এলাকা আকাশপথে পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের সময়ে দুপুর ৩টে ২ মিনিটে করা এক্স হ্যান্ডলের এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘হিমাচল প্রদেশে বন্যা ও ভূমিধসের পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য একটি আকাশ সমীক্ষা চালানো হয়েছে। এই কঠিন সময়ে আমরা দৃঢ় ভাবে ওই জনগণের পাশে রয়েছি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের নিরন্তর সহায়তা নিশ্চিত করায় সর্বাত্মক প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে।' মাণ্ডি ও কুলু জেলা পরিদর্শনের পর তিনি কাংড়ায় পৌঁছন। সেখানে গাগ্গাল বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান হিমাচলের রাজ্যপাল শিব প্রতাপ শুক্লা, মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী মুকেশ অগ্নিহোত্রী। উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা জয় রাম ঠাকুর, প্রদেশ বিজেপি সভাপতি রাজীব বিন্দল এবং অন্যান্য বিজেপি বিধায়করাও। এরপরেই প্রধানমন্ত্রী রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য সরকারের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বসেন দুর্যোগ পরিস্থিতি নিয়ে প্রেজেন্টেশন দেখার জন্য। সেখানে তাঁকে জানানো হয়, ভারী বর্ষণে সৃষ্ট ক্লাউডবার্স্ট, আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে রাজ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সফরকালে কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে ত্রাণ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন। তিনি জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী এবং রাজ্য দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনীর কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন, যারা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। এরপরেই প্রধানমন্ত্রী মোদী বন্যা বিধ্বস্ত হিমাচলের জন্য ১,৫০০ কোটি টাকার অর্থ সাহায্য ঘোষণা করেন।এসডিআরএফ এবং প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধির দ্বিতীয় কিস্তি অগ্রিম প্রদান করা হবে।একই সঙ্গে রাজ্যের বন্যা ও ভূমিধসের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মোদী নিহতদের পরিবারের জন্য ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের জন্য ৫০,০০০ টাকা অনুদান ঘোষণা করেছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০ জুন থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিজনিত বিপর্যয়ে হিমাচল প্রদেশে প্রায় ৪,১২২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ সময় প্রাণ হারিয়েছেন মোট ৩৭০ জন। এরমধ্যে ২০৫ জনের মৃত্যু সরাসরি বৃষ্টি-জনিত কারণ, ভূমিধসে ৪৩ জন, ক্লাউডবার্স্টে ১৭ জন এবং আকস্মিক বন্যায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও ৪১ জন নিখোঁজ রয়েছেন। অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৬৫ জন।
পাঞ্জাবে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হিমাচল প্রদেশের কাংরা থেকে পাঞ্জাবের গুরদাসপুরে পৌঁছে বন্যার কবলিত অঞ্চলের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন। গুরদাসপুরে তাঁকে স্বাগত জানান পাঞ্জাবের রাজ্যপাল গুলাবচাঁদ কাটারিয়া, কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী কুলদীপ সিং ধলিওয়াল, পশুপালন মন্ত্রী গুরমীত সিং খুড্ডিয়ান-সহ অন্যান্য বিজেপি নেতা ও রাজ্য সরকারের কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি একটি বিশেষ সভা ডেকে পাঞ্জাবে পরিস্থিতির আপডেট নিয়েছেন এবং বন্যাকবলিত পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেছেন।এরপরেই জন্য ১,৬০০ কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এসডিআরএফ এবং প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধির দ্বিতীয় কিস্তি অগ্রিম প্রদান করা হবে। তাঁর সফরের আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রধানমন্ত্রী জানান, কেন্দ্র সরকার এই দুঃসময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছে এবং তাদের সকল সহায়তা নিশ্চিত করবে।
উল্লেখ্য, বন্যাকবলিত রাজ্যগুলির পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপি শাসিত রাজ্য আরুণাচল প্রদেশ, অসম, হরিয়ানা, ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, গোয়া ও গুজরাট ৫ কোটি টাকা করে অনুদান দিয়েছে এবং খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রীর ট্রাক পাঠিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বন্যার দুঃসহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।