'ভোট চুরি'র অভিযোগ করায় লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীকে যে ভাষায় আক্রমণ করেছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার, তা সঠিক নয় বলেই মনে করছেন দেশের তিন প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার। ওই তিন প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার হলেন-এস ওয়াই কুরেশি, ওপি রাওয়াত ও অশোক লাভাসা।এক মিডিয়া কনক্লেভে তাঁরা বলেন, রাহুল গান্ধীর কাছ থেকে হলফনামা চাওয়ার বদলে কমিশনের উচিত ছিল অভিযোগের তদন্ত করা।
ইন্ডিয়া টুডে'স সাউথ কনক্লেভে এস ওয়াই কুরেশি বলেন, 'রাহুল গান্ধী বিরোধী দলের নেতা। তিনি কেবল নিজের কথা বলছেন না, বরং কোটি কোটি মানুষের বক্তব্য তুলে ধরছেন। তাই তাঁর মন্তব্যে কমিশনের রাগ দেখানো কমিশনের মানানসই আচরণ নয়।' তিনি আরও বলেন, যদি তিনি এখন সিইসি হতেন, তাহলে অভিযোগটি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত শুরু করতেন। তাঁর কথায়, 'এই ধরনের রাগত প্রতিক্রিয়া কমিশনের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।' অন্যদিকে ওপি রাওয়াত বলেন, 'নির্বাচন কমিশন কখনোই কোন পক্ষকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে না। সাধারণ এক ভোটারও যদি প্রশ্ন তোলে, কমিশন তা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে।' অশোক লাভাসা বলেন, 'এই অভিযোগ কমিশনেরই প্রকাশিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। তাই কমিশনের কর্তব্য ছিল তা তদন্ত করা। হলফনামা চাওয়ার কোনও প্রয়োজন ছিল না।' তিনি বলেন, 'যখন কমিশনের তত্ত্বাবধানে তৈরি ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তখন সেই সন্দেহ ঝেড়ে ফেলার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনেরই।' রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার যে রাজনৈতিক প্রভুদের প্রতি আনুগত্য দেখাতেই রাহুলকে নিশানা করেছেন, তাও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন কুরেশি-লাভাসারা।
সিইসি জ্ঞানেশ কুমারের প্রতিক্রিয়া
গত ৭ আগস্ট এক সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার তালিকার তথ্য তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিজেপির সঙ্গে মিলে 'ভোট চুরি'-র অভিযোগ করেন। তিনি বিহারেও একাধিক জনসভায় এই অভিযোগ তোলেন, যেখানে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (এসআইআর) চলছে। পাল্টা জবাবে গত ১৭ আগস্ট মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সি জ্ঞানেশ কুমার এক সাংবাদিক বৈঠকে রাহুলের অভিযোগ খারিজ করে বলেন, 'অভিযোগ করলে হলফনামা দিতে হবে অথবা দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এর কোনও তৃতীয় বিকল্প নেই।' তিনি কংগ্রেস নেতাকে সাত দিনের আল্টিমেটামও দিয়েছিলেন।
কিন্তু প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনারদের মতে, এই আক্রমণাত্মক ও রাগত সুর কমিশনের নিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক মানদণ্ডকে আঘাত করেছে। তাঁরা বলেন, গণতন্ত্রে মানুষের আস্থা বজায় রাখতে কমিশনের উচিত অভিযোগের দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্ত। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা রক্ষা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার-এটাই বলছেন দেশের অভিজ্ঞ প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনাররা।