ফের একবার ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে নেপাল। জেন জি দের বিক্ষোভে টলে গিয়েছে সে দেশের সরকার। সোমবার সকাল থেকে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নামে। সরকার প্রতিরোধের চেষ্টা করলে ১৯ জনের মৃত্যু হয়। জখম হয়েছেন অন্তত ৫০০। মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্র-যুবদের আন্দোলনের কাছে নতিস্বীকার করে পদত্যাগ করেছেন নেপালের সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। আরও একাধিক মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। অনেকেই দেশ ছেড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে অস্থির নেপালের দায়িত্ব কাঠমান্ডুর মেয়র, বছর পঁয়ত্রিশের বলেন্দ্র শাহ বা বলেনের হাতে তুলে দিতে চাইছেন আন্দোলনকারীরা।
২৮ বছরের বয়সসীমার কারণে এই বিক্ষোভে নিজে যোগ দেননি কাঠমান্ডুর মেয়র বলেন্দ্র শাহ। কিন্তু মুক্তকন্ঠে এক ফেসবুক পোস্টে আন্দোলনের প্রতি জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘আমার পূর্ণ সহানুভূতি রয়েছে তরুণদের সঙ্গে।’ একই সঙ্গে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থে আন্দোলনকে কাজে না লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর কথা তরুণ নেপালিদের মনে দাগ কেটেছে, যাদের অনেকেই তাঁকে দেশের প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্বের রাজনৈতিক বিকল্প হিসেবে দেখতে চাইছেন।সোমবার ও মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকার পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিল, ওলি পদত্যাগ করবেন না। তবে টানা বিক্ষোভ এবং জনগণের চাপের মুখে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এখন পুরো দেশ বলেন্দ্র শাহের সম্ভাব্য নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি কি সত্যিই নেপালের ভবিষ্যৎ নেতা হবেন, এ নিয়ে জোর আলোচনা চলছে।
বলেন্দ্র শাহ বা বলেন কে?
বলেন শাহ জন্মগ্রহণ করেন ২৭ এপ্রিল ১৯৯০ সালে কাঠমান্ডুতে। তিনি একটি মৈথিল-মধেশি পরিবার থেকে এসেছেন। বলেন্দ্রের পড়াশোনা নেপালের ভিএস নিকেতন উচ্চমাধ্যমিক স্কুল থেকে। হিমালয়ান হোয়াইটহাউস ইন্টারন্যাশনাল কলেজ থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্ণাটকের বিশ্বেশ্বরীয়া টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি (ভিটিইউ) থেকে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন বলেন্দ্র। নেপালে হিপ-হপ ও র্যাপ সঙ্গীতের একজন পরিচিত মুখ তিনি।নিজের সুরারোপ করা গানেও দুর্নীতি এবং আর্থিক বৈষম্য নিয়ে বিদ্রুপ করেছেন বলেন্দ্র। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার বলেনের রাজনৈতিক উত্থান উল্কার গতিতে।র্যাপার হিসাবে পাওয়া জনপ্রিয়তাকে অস্ত্র করেই ভোটে দাঁড়ান তিনি। ২০২২ সালে নির্দল প্রার্থী হিসাবে রাজনীতির ময়দানে পা রাখেন তিনি। কাঠমান্ডুর মেয়র নির্বাচনে শাসকদলের তাবড় তাবড় প্রার্থীকে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে লড়াই করে জয় ছিনিয়ে নেন বলেন।
তারপর থেকে দুর্নীতি বিরোধী মুখ হয়ে উঠেছেন বলেন। দুর্নীতির প্রতি জিরো টলারেন্স, শহরের রাস্তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে বিশেষ উদ্যোগ, সরকারি স্কুলের উন্নতি এবং কর ফাঁকি দেওয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার মতো সংস্কার শুরু করার জন্য তিনি বিশেষ জনপ্রিয়। আন্তর্জাতিক স্তরেও নজর কেড়েছেন এই তরুণ রাজনীতিক। ‘টাইম ম্যাগাজিন’ তাঁকে শীর্ষ ১০০ উদীয়মান নেতার তালিকায় স্থান দিয়েছে, অন্যদিকে ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ তাঁর স্বচ্ছতা এবং তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতির প্রশংসা করেছে।নেপালের তরুণরা শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে বলেনের তুলনা করতে শুরু করেছে। মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশের দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে তাঁকে। তাঁকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে দেশ পরিচালনার আবেদন জানানো হচ্ছে। সেই দেশের বৃহৎ অংশের মানুষের দাবি, দেশের তিনটি ঐতিহ্যবাহী প্রধান দলের নেতারা তাদের কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সেই কারণে নতুন দলের প্রয়োজন।
এই আন্দোলন নেপালের রাজনীতিতে নতুন হাওয়া এনেছে। কিন্তু বলেন এবং অন্যান্য স্বাধীনরা জাতীয় সরকার পরিচালনার বৃহত্তর এবং আরও জটিল চ্যালেঞ্জগুলি পরিচালনা করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে।