দুবাইতে রবিবার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এশিয়া কাপের ভারত বনাম পাকিস্তানের ম্যাচটি। আর সেই ম্যাচ ঘিরেই তীব্র রাজনৈতিক তরজা দেশে। এই ম্যাচ ঘিরে দেশ কার্যত বিভক্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ম্যাচ বিরোধী একাধিক হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করছে। এরই মাঝে শাসত বিজেপিকে তোপ দাগতে ছাড়ছে না বিরোধী দলগুলি। পহেলগাঁও হামলার কয়েক মাস যেতে না যেতেই কীভাবে এই ম্যাচ হতে দিচ্ছে সরকার, তা নিয়ে প্রশ্নবাণ ছুড়ে চলেছে বিরোধী থেকে আম জনতার একাংশ।
এই নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মনোহর লাল বলেন, 'দুটো (নিরাপত্তা এবং খেলা) বিষয় আলাদা। খেলার কথা বলতে হলে বলব, খেলায় সেন্টিমেন্ট আছে, খেলোয়াড়রাও এর জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছে। তাই এর বিরোধিতা করা ঠিক নয়। এজন্য যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।' প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী এবং বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুরও ব্যাখ্যা করেছিলেন যে টুর্নামেন্টের নিয়মের কারণে ভারতের অংশগ্রহণ হয়েছিল। তিনি বলেন, 'এসিসি বা আইসিসি যখন বহুজাতিক টুর্নামেন্টের আয়োজন করে, তখন তা বাধ্যবাধকতা হয়ে পড়ে। ভারত না খেললে ম্যাচ হারাতে হবে এবং পয়েন্ট হারাতে হবে। কিন্তু ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক টুর্নামেন্ট খেলে না এবং পাকিস্তান সন্ত্রাসে মদত দেওয়া বন্ধ না করা পর্যন্ত এই নীতি অপরিবর্তিত থাকবে।
এদিকে এই সব যুক্তি মানছে না বিরোধীরা। বিজেপি এবং বিসিসিআইকে ফিক্সচারের অনুমতি দেওয়ার জন্য সমালোচনা করেছে তারা। উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল, পাকিস্তানি সন্ত্রাসীরা দক্ষিণ কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বাইসারান তৃণভূমিতে হামলা চালিয়ে ২৬ জন সাধারণ মানুষকে খুন করেছিল। মৃতদের মধ্যে ২৫ জনই পর্যটক ছিলেন। তাদের ধর্ম জিজ্ঞেস করে খুন করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। সেই ঘটনার কয়েক মাস যেতে না যেতেই ভারত এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলায় গর্জে উঠেছে বিরোধীদলগুলি। শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা আদিত্য ঠাকরে বলেছেন, 'রক্তপাত এবং ক্রিকেট একসাথে চলতে পারে না।' অন্যদিকে মহারাষ্ট্র কংগ্রেস এটিকে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত সাধারণ মানুষ এবং জওয়ানদের প্রতি 'অপমান' বলে অভিহিত করেছে।
এদিকে শিবসেনা (ইউবিটি) প্রধান উদ্ধব ঠাকরে মহারাষ্ট্র জুড়ে 'সিঁদুর' বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই ম্যাচ বয়কট করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান গোটা বিশ্বকে জানানোর একটি সুযোগ ছিল ভারতের কাছে। শনিবার মুম্বইয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'যতক্ষণ পর্যন্ত সন্ত্রাস বন্ধ না হয়, ততক্ষণ আমাদের পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত নয়।' বিজেপিকে নিশানা করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, সরকার কি ঘোষণা করতে যাচ্ছে যে অপারেশন সিঁদুর বন্ধ হয়ে গেছে এবং দেশপ্রেমিকদের? এরই সঙ্গে আজকের ভারত-পাক ম্যচটি না দেখার জন্য সকলকে আহ্বান জানান উদ্ধব। তাঁর কথায়, পহেলগাঁও হামলার ক্ষত এখনও তাজা রয়েছে। উদ্ধব বলেন, 'এই ক্রিকেট ম্যাচ জাতীয় অনুভূতির অপমান। আমাদের কি পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা উচিত? যখন আমাদের সেনারা সীমান্তে তাদের জীবন উৎসর্গ করছে, তখন এই ম্যাচ হওয়া উচিত?'
দিল্লির প্রাক্তন মন্ত্রী ও আপ নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ দলীয় কর্মীদের সঙ্গে জাতীয় রাজধানীতে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের প্রতীকী পুশপুত্তলিকাও দাহ করেন। সৌরভ ভরদ্বাজ সাংবাদিকদের বলেন, 'পহেলগাঁও হামলায় স্বামীকে হারানো আমাদের মহিলাদের জন্য এই ম্যাচটি চরম অপমানজনক। কিন্তু এখনও আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।' পরে এক্স-এ একটি পোস্ট করে তিনি লেখেন, 'পাকিস্তানের ক্রিকেট খেলোয়াড়রা আমাদের বিধবাদের এমন নোংরা, ঘৃণ্য ভাবে উপহাস করেছিল এবং আমরা তাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলব। বিজেপি সরকারের জন্য লজ্জা লাগে।'