উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে ফের সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের পরের দিনই রবিবার স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং চূড়াচাঁদপুর থানায় হামলা চালানো হয়। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন অনেকে। জানা গেছে, ব়্যাযাপিড অ্যাকশন ফোর্সের (আরএএফ) সদস্যদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে স্থানীয় লোকজন।
জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফর উপলক্ষে লাগানো ব্যানার ও কাটআউট ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে চূড়াচাঁদপুর জেলায় দুই যুবককে আটক করা হয়েছিল। রবিবার স্থানীয় জনতা থানার সামনে জড়ো হয় এবং সেই দু'জনের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। শীঘ্রই, ভিড় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে এবং সহিংসতা শুরু হয়। এক ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জনতা চূড়াচাঁদপুর থানায় হামলা চালানোর চেষ্টা করে। বিক্ষোভের সময় কর্তব্যরত আরএএফ কর্মীদের ওপর জনতা পাথর ছুড়ে মারে। ডিউটি ম্যাজিস্ট্রেটের জামিনের শুনানি শেষে ওই দুই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে স্বাগত জানাতে চূড়াচাঁদপুর জুড়ে বহু ব্যানার লাগানো হয়েছিল। তবে ১১ সেপ্টেম্বর রাতে পিয়ারসনমুন এবং ফিলিয়ন বাজারে বেশ কয়েকটি ব্যানার এবং কাটআউট ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন যুবককে আটক করে পুলিশ। তবে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে সেই দুই যুবককে হেফাজতে রাখা হয়েছিল। অবিলম্বে তাদের মুক্তির দাবিতে চুড়াচাঁদপুর থানার কাছে বিক্ষোভ দেখায় জনতা। এরপরই বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করে। দুই যুবকের মুক্তির পর অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। পুলিশ এর আগে দাবি করেছিল যে এই দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ওই দুই যুবককে ঘটনাস্থল থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
গত ২০২৩ সালের ৩ মে থেকে জাতিগত হিংসার সাক্ষী মণিপুর। মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ছিল। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি অবস্থা। এখনও পর্যন্ত কয়েক হাজার জনকে নিজেদের বাড়ি ছাড়তে হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। অনেকেই সরকারি ক্যাম্পে আছেন। চূড়াচাঁদপুর, মোরে, কাকচিং এবং কাংপোকপি জেলা থেকে অধিকাংশ মানুষকে সরানো হয়েছে। এরই মধ্যে হিংসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। প্রসঙ্গত, ইম্ফল উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হল মৈতৈ জনজাতি। তবে তারা সম্প্রতি দাবি তুলেছিল যে তাদের তফসিলি উপজাতির তকমা দিতে হবে। তাদের এই দাবির বিরোধ জানিয়েছিল স্থানীয় কুকি-জো আদিবাসীরা। এদিকে হাই মণিপুর হাই কোর্টে এই নিয়ে মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় হাই কোর্ট নির্দেশ দেয়, মৈতৈদের নাম তফশিলি উপজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব কি না, তা খতিয়ে দেখুক রাজ্য। এই নির্দেশিকার পরই জো-কুকি সম্প্রদায়ের মানুষরা প্রতিবাদে নামেন। এই আবহে ২০২৩ সালের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন একটি মিছিলের আয়োজন করেছিল। সেই মিছিল ঘিরেই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে চূড়াচাঁদপুর জেলায়। পরে অবশ্য হাই কোর্ট সংরক্ষণ নিয়ে নিজেদের সেই পর্যবেক্ষণ ফিরিয়ে নেয়।
তবে এখনও মণিপুরে হিংসার আগুন নেভেনি। এদিকে তফশিলি উপজাতির ইস্যুর পাশাপাশি সংরক্ষিত জমি এবং সার্ভে নিয়েও উত্তাপ ছড়িয়েছিল সেই রাজ্যে। এই আবহে গত ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসেই চূড়াচাঁদপুর জেলায় মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সভাস্থলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরামের সদস্যরা। এদিকে এই জেলা থেকে কুকি আদিবাসী বনাম মৈতৈদের এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য জেলাতেও। আর এখনও পর্যন্ত সেই হিংসা প্রাণ হারিয়েছেন কয়েকশো সাধারণ মানুষ। বাফার জোন করে মৈতৈ এবং কুকিদের ভিন্ন এলাকায় রাখা হয়েছে। তার মধ্যেও মাঝে মাঝেই বাঁধছে সংঘাত। একে অপরের দিকে আঙুল তুলছে দুই জনজাতি।