নির্বাচনী মরশুমে রাজনীতিতে কুকথার স্রোত। সম্প্রতি ভোটমুখী বিহারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর প্রয়াত মা-কে নিশানা করে কুকথা শোনা গিয়েছে। যা নিয়ে রবিবার বিরোধীদের নিশানা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণই তাঁর প্রভু এবং 'রিমোট কন্ট্রোল।' তাই জনগণের সামনেই তিনি তাঁর যন্ত্রণা প্রকাশ করেন। তাঁর প্রয়াত মা হীরাবেন সমন্ধে কটূক্তি নিয়ে তীব্র বিতর্কের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, তিনি ভগবান শিবের ভক্ত এবং গালিগালাজের গরল গিলে ফেলবেন।
রবিবার অসমের দারাংয়ে বেশ কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরপরেই এক সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'কংগ্রেসের আক্রমণের ধরন আমি জানি। আমাকে লক্ষ্য করে বলবে মোদী আবার কাঁদছেন। জনগণই আমার ঈশ্বর; আমি যদি তাদের সামনে আমার যন্ত্রণা প্রকাশ না করি, তাহলে আমি কোথায় করব? তারাই আমার প্রভু, আমার দেবতা এবং আমার রিমোট কন্ট্রোল। আমার কাছে আর কোনও রিমোট কন্ট্রোল নেই।' সম্প্রতি বিহারে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে নিশানা করেও কটূক্তি শোনা গিয়েছে। এমনকী তাঁর মা, প্রয়াত হীরাবেন মোদীকেও নিশানা করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিজেপির। তারমধ্যেই কংগ্রেসের তৈরি একটি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক ভিডিও ঘিরে এফআইআর পর্যন্ত দায়ের হয়েছে। এই আবহে প্রধানমন্ত্রীর মুখে 'রিমোট কন্ট্রোল' শব্দের অত্যন্ত তাৎপর্য রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। অতীতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর অভিযোগ ছিল যে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে নিয়ন্ত্রণ করতেন প্রাক্তন ইউপিএ চেয়ারপার্সন সনিয়া গান্ধী। সেই সূত্রেই তাঁর 'রিমোট কন্ট্রোল' শব্দের ব্যবহার। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে চালিত হন গান্ধী পরিবারের রিমোট-কন্ট্রোলে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর এই অভিযোগ কংগ্রেস বারবার খারিজ করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন-'১০০ শতাংশ খুন হবেন!' ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ কার্ককে আগেই সতর্কবার্তা নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ-র
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, কেন্দ্র অসমের কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী প্রয়াত ভূপেন হাজারিকাকে ভারতরত্ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা তাঁকে খাড়গে-র একটি মন্তব্য দেখিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, 'যেদিন ভারত সরকার এই দেশের মহান পুত্র এবং অসমের গর্ব ভূপেন হাজারিকাকে ভারতরত্ন দিয়ে সম্মানিত করেছে, সেদিন কংগ্রেস সভাপতি বলেছিলেন যে মোদী 'গায়ক এবং নৃত্যশিল্পীদের' এই পুরস্কার দিচ্ছেন।' ২০১৯ সালে ভূপেন হাজারিকাকে ভারতরত্ন দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছিল। অবশ্য মল্লিকার্জুন খাড়গে সেই সময়ে কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন না।তবে প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পীকে সম্মান জানানো নিয়ে তাঁর মন্তব্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। পরে মল্লিকার্জুন খাড়গে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, 'ড. হাজারিকা ছিলেন আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রতিভাবান শিল্পীদের একজন, যাঁর অসাধারণ প্রতিভা- সঙ্গীত, কবিতা, সাহিত্য এবং সিনেমাকে ঘিরে ছিল। তাঁর অবদান অসমের সংস্কৃতি ও শিল্পকে বিশ্বের নজরে এনেছিল।'
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর কথা উল্লেখ করে মোদী বলেন, ১৯৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধের পর দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে 'উত্তর-পূর্বের জনগণের ক্ষত এখনও সেরে যায়নি। কংগ্রেসের বর্তমান প্রজন্ম সেই ক্ষতেই নুন ছিটিয়ে দিচ্ছে।' তাঁর কথায়, 'কয়েক দশক ধরে, কংগ্রেস অসম শাসন করেছে, তবুও তারা ৬০ থেকে ৬৫ বছরে ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর মাত্র তিনটি সেতু নির্মাণ করেছে। কিন্তু, যখন আপনারা আমাদের সুযোগ দিয়েছেন, তখন আমরা মাত্র এক দশকে ছয়'টি নতুন সেতু নির্মাণ করেছি। এটা স্বাভাবিক যে, আপনি আমাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করবেন এবং আপনার সমর্থন দিয়ে আমাদের আশীর্বাদ করবেন।' অপারেশন সিঁদুরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, 'কংগ্রেস তাদের শাসনকালে সন্ত্রাসবাদের সময় নীরব থাকত। এখন, আমাদের বাহিনী অপারেশন সিঁদুর পরিচালনা করে, পাকিস্তানের প্রতিটি কোণ থেকে সন্ত্রাসকে উপড়ে ফেলছে, কিন্তু কংগ্রেসের লোকেরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গেই রয়েছে। তারা তাদের এজেন্ডা এগিয়ে নিয়ে চলেছে। পাকিস্তানের মিথ্যাচারই কংগ্রেসের এজেন্ডা। সেজন্যই আপনাদের কংগ্রেস থেকে সর্বদা সাবধান থাকা উচিত।'
আরও পড়ুন-'১০০ শতাংশ খুন হবেন!' ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ কার্ককে আগেই সতর্কবার্তা নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ-র
এছাড়াও অসমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুপ্রবেশকে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য ভোট ব্যাঙ্ক এবং তারা দেশকে নিয়ে কখনও চিন্তা করে না। তিনি বলেন, 'এখন কংগ্রেস দেশবিরোধী এবং অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষক হয়ে উঠেছে। কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তারা অনুপ্রবেশকে উৎসাহিত করেছিল এবং এখন তারা চায় অনুপ্রবেশকারীদের চিরতরে দেশে বসতি স্থাপন করুক এবং ভারতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করুক।'