বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে বিশ্বের একের পর এক দেশ। সম্প্রতি তরুণ তুর্কিদের বিক্ষোভের আগুনের পুড়ে ছিল নেপাল। এবার বিদ্রোহের আগুন জ্বলল ব্রিটেনেও। উগ্র ডানপন্থী নেতা টমি রবিনসনের নেতৃত্বে আয়োজিত অভিবাসন-বিরোধী মিছিল ঘিরে রণক্ষেত্র লন্ডন। শনিবার সেন্ট্রাল লন্ডন দেখল ব্রিটেনের ইতিহাসের অন্যতম বড় ডানপন্থী বিক্ষোভ। লক্ষ লক্ষ মানুষ নেমে আসেন লন্ডনের রাস্তায়। 'ইউনাইট দ্য কিংডম' নামের এই র্যালিতে রবিনসনের সমর্থকরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
টমি রবিনসনের ডাকে লক্ষ মানুষের জমায়েতে অভিবাসনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে ব্রিটেনের রাজধানী। ব্রিটেনের বহু জায়গা থেকে ইউনিয়ন জ্যাক হাতে মিছিলে হাজির হন মানুষ।পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, রবিনসনের র্যালিতে আনুমানিক ১,১০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ লোক জমায়েত হয়েছিল, যা তাদের পূর্ব-অনুমানের চেয়ে অনেক বেশি। একই সময়ে, 'স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম' নামের একটি সংগঠনের আয়োজিত 'মার্চ অ্যাগেইনস্ট ফ্যাসিজম' প্রতিবাদে প্রায় ৫,০০০ বিক্ষোভকারী অংশ নিয়েছিলেন। ব্রিটেনের জাতীয় পতাকা, বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন হাতে নিয়ে আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন তাঁরা। সবার একই দাবি, অনাবাসীর সংখ্যায় রাশ টানতে হবে। ব্রিটেনে ইংরেজদের চেয়েও ‘বাইরের’ লোকজনের ক্ষমতা হয়ে যাচ্ছে বেশি। এই ব্যবস্থা অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। কিন্তু অভিযোগ, রবিনসনের সমর্থকরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, যখন পুলিশ তাদের প্রতিপক্ষ বিক্ষোভকারীদের থেকে আলাদা করার চেষ্টা করছিল। মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের একটি ছোট দল পুলিশ কর্মকর্তাদের ঘুষি, লাথি মারে এবং বোতল ছুঁড়ে মারে। এই ঘটনার পর ১০০০-এরও বেশি পুলিশ সদস্যকে দাঙ্গা প্রতিরোধী হেলমেট এবং ঢাল নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয়।
আরও পড়ুন-'২৪৩ আসনেই আমি প্রার্থী!' তেজস্বীর ঘোষণায় বিহারে জটিলতা, বিরোধী জোটে আসন সঙ্কট
এই সংঘর্ষে অন্তত ২৬ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। এরমধ্যে চারজনের আঘাত গুরুতর। একজনের দাঁত ভেঙেছে, একজন মাথায় আঘাত পেয়েছেন, একজনের নাক ভেঙেছে এবং আরেকজন মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় সহিংসতা-সহ বিভিন্ন অপরাধের জন্য কমপক্ষে ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তদন্ত এখনও চলছে। সহকারী কমিশনার ম্যাট টুইস্ট বলেন, 'নিঃসন্দেহে অনেকে তাদের বৈধ প্রতিবাদের অধিকার প্রয়োগ করতে এসেছিলেন, কিন্তু অনেকেই সহিংসতা করার উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিলেন।' তিনি আরও জানান, এই ব্যক্তিরা পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে শারীরিক নির্যাতন করেছে এবং ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছে।
আরও পড়ুন-'BCCI-র কোনও আবেগ নেই!' ভারত-পাক মহারণে ক্ষুব্ধ পহেলগাঁওকাণ্ডে নিহতের স্ত্রী
এই বিক্ষোভকে 'মুক্ত বাক' রক্ষার একটি প্রতিবাদ হিসেবে প্রচার করা হয়েছিল। ইউরোপ জুড়ে উগ্র ডানপন্থী রাজনীতিবিদরা এই সমাবেশে ইউরোপীয়দের 'গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট' নিয়ে কথা বলেন, যেখানে তারা অভিবাসনের বিপদ নিয়ে সতর্ক করেন। ফরাসি উগ্র ডানপন্থী রাজনীতিবিদ এরিক জেমুর বলেন, 'আমরা উভয়ই একই প্রক্রিয়ার শিকার, যেখানে আমাদের ইউরোপীয়দের স্থান দক্ষিণ থেকে আসা এবং মুসলিম সংস্কৃতির লোকেরা দখল করছে। আমরা আমাদের প্রাক্তন উপনিবেশগুলির দ্বারা পুনরায় উপনিবেশিত হচ্ছি।' অন্যদিকে,ভিডিও কলের মাধ্যমে সমাবেশে যুক্ত হন টেসলা কর্তা ইলন মাস্ক। তিনি ব্রিটিশ সরকারের সমালোচনা করে বলেন, 'ব্রিটিশদের মধ্যে কিছু সুন্দর জিনিস রয়েছে, কিন্তু আমি দেখছি এটি ধ্বংস হচ্ছে। শুরুতে এটি ছিল ধীরে ধীরে ক্ষয়, কিন্তু এখন তা অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসনের কারণে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।' এদিকে সমাবেশ থেকে রবিনসন বলেন, এই জাতির নির্মাতারা, অর্থাৎ ব্রিটিশ জনগণের চেয়ে এখন অভিবাসীরা আদালতে বেশি অধিকার পাচ্ছে। এই সমাবেশটি এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের ছোট নৌকায় করে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে আসার ঘটনা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসন দেওয়া হোটেলগুলির বাইরে একাধিক অভিবাসন বিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে কিছু সহিংস হয়ে ওঠে এবং গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটে।