সোমবার সুপ্রিম কোর্ট পুরো ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন, ২০২৫ স্থগিত করতে অস্বীকার করেছে। তবে এই আইনের কিছু বিধান স্থগিত করেছে। ওয়াকফ সংশোধনীতে একটি বিধানে কলেক্টরকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল যে তিনি ঘোষিত সম্পত্তি সরকারি কিনা তা নির্ধারণ করতে পারবেন। সেই ক্ষমতাবলে কলেক্টর সেই সংক্রান্ত আদেশও পাস করতে পারবেন। তবে এই বিধানটি আপাতত স্থগিত করেছে প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি এজি মাসিহের বেঞ্চ। এদিকে একজন ব্যক্তি পাঁচবছর ইসলামধর্ম পালন করলে তবেই ওয়াকফে সম্পত্তি দান করতে পারবেন, এই বিধানও অন্তর্বর্তীভাবে স্থগিত করেছে শীর্ষ আদালত।
উল্লেখ্য, গত ৫ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাতে সম্মতি দেওয়ার পর গত মাসে ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন, ২০২৫ সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্র। লোকসভায় ২৮৮ জন সদস্যের সমর্থন নিয়ে ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল পাস হয়, যেখানে ২৩২ জন সাংসদ এর বিপক্ষে ছিলেন। রাজ্যসভায় এর পক্ষে ভোট দেন ১২৮ জন এবং বিপক্ষে ভোট দেন ৯৫ জন। এরপর বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল, মুসলিম সংগঠন এবং এনজিও এই আইনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ওয়াকফ আইন, ১৯৯৫ সংশোধন করার লক্ষ্যে সংসদে পাশ করানো হয়েছিল এই নয়া ওয়াকফ সংশোধনী আইনটি। ওয়াকফ বোর্ডগুলির কাজকর্মে আরও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং এই সংস্থাগুলিতে মহিলাদের বাধ্যতামূলক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার জন্য এই আইন আনা হলে বলে দাবি বিজেপির। তবে এই ওয়াকফ কী?
ওয়াকফ হল মুসলিম আইন দ্বারা স্বীকৃত ধর্মীয়, ধার্মিক বা দাতব্য উদ্দেশ্যে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির একটি স্থায়ী উৎসর্গ। আর তাহলে ওয়াকফ সম্পত্তি কী? ওয়াকফ সম্পত্তি ইসলামের অনুসারীদের দ্বারা দান করা হয় এবং সম্প্রদায়ের সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত হয়। প্রতিটি রাজ্যের একটি ওয়াকফ বোর্ড রয়েছে, যা একটি আইনী সত্তা যা সম্পত্তি অর্জন, ধারণ এবং স্থানান্তর করতে পারে। ওয়াকফ সম্পত্তি স্থায়ীভাবে বিক্রি বা লিজ দেওয়া যায় না। ওয়াকফের বিভিন্ন প্রকার বৈশিষ্ট্য কি কি? এর মধ্যে রয়েছে কৃষিজমি, দালানকোঠা, দরগাহ/মাজার ও কবরস্থান, ইদগাহ, খানকাহ, মাদ্রাসা, মসজিদ, প্লট, পুকুর, স্কুল, দোকানপাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
এদিকে ওয়াকফ আইন, ১৯৯৫ কী? এই আইন অনুসারে, ওয়াকফ হল 'পবিত্র, ধর্মীয় বা দাতব্য হিসাবে ইসলামে নির্ধারিত উদ্দেশ্যে স্থাবর বা স্থাবর সম্পত্তির স্থায়ী উৎসর্গ'। বিজেপি সরকার কেন ওয়াকফ আইন সংশোধন করেছে? শাসকদলের বক্তব্য, ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইন সংশোধনের বিলে বলা হয়েছিল, ওয়াকফ বোর্ডগুলিকে বাধ্যতামূলক ভাবে তাদের সম্পত্তি জেলা কালেক্টরদের কাছে নথিভুক্ত করতে হবে, যাতে তাদের প্রকৃত মূল্যায়ন নিশ্চিত হয়। বর্তমানে, ওয়াকফ বোর্ডের বেশিরভাগ সদস্য নির্বাচিত হন, তবে নতুন বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার পরে সমস্ত সদস্যকে সরকার মনোনীত করবে। আশঙ্কা রয়েছে যে এই বিধানটি ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের বোর্ডের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করবে। নতুন আইনে বলা হয়েছে, একজন অমুসলিমও সিইও হতে পারবেন এবং কমপক্ষে দুজন সদস্য অমুসলিম হতে হবে।
ভারতে ওয়াকফ বোর্ড কতটুকু জমি নিয়ন্ত্রণ করে? এটির অধীনে ৮.৭ লক্ষ সম্পত্তি আছে। ৯.৪ লক্ষ একর জমি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে ওয়াকফ। যার আনুমানিক মূল্য ১.২ লক্ষ কোটি টাকা। এর ফলে ওয়াকফ বোর্ড ভারতীয় রেল এবং সশস্ত্র বাহিনীর পরে তৃতীয় বৃহত্তম জমির মালিক হয়ে উঠেছে। ভারতে ৩০টি ওয়াকফ বোর্ড রয়েছে।