ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী উত্তর ২৪ পরগনার টাকি, একসময় শান্ত নদীঘেরা শহর ছিল। এখন পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র। বিশেষ করে ইছামতীর তীরে গড়ে ওঠা নানা রিসর্ট-হোটেল সারা বছর ভ্রমণপিপাসুদের টানে। কিন্তু এই উন্নয়নের আড়ালে অন্য ছবি উঠে এসেছে। অভিযোগ, সেচ দফতরের জমি দখল করে একের পর এক বেআইনি বিলাসবহুল হোটেল ও রিসর্ট নির্মাণ চলছে। আর সেই অভিযোগ নিয়েই এবার কলকাতা হাইকোর্টের দায়ের হল জনস্বার্থ মামলা।
আরও পড়ুন: অবৈধ নির্মাণ নিয়ে আদালতে মামলা, TMC নেতার নির্দেশে ‘সামাজিক বয়কট’ পরিবারকে
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এক পরিবেশবিদ প্রথমে বিষয়টি রাজ্য প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানান। রাজ্যের পরিবেশ দফতর, সেচ দফতর, বসিরহাট মহকুমা শাসক এবং টাকি পুরসভার কাছে তিনি লিখিত অভিযোগ জানান। তাতেও যথাযথ ব্যবস্থা না হওয়ায়, শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। আইনজীবী দিগন্ত বোস মামলাটি লড়ছেন। বিচারপতি সুজয় পাল ও বিচারপতি স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি হতে চলেছে। সম্ভাবনা রয়েছে, এই সপ্তাহেই বিষয়টি আদালতে ওঠার। এই মামলায় আদালত কী নির্দেশ দেয় তা নিয়েই এখন জোর জল্পনা শুরু হয়েছে আইনজীবী মহলে।
মামলায় অভিযোগ, বেআইনি নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হোটেলগুলির মধ্যে একটি নাকি স্থানীয় প্রভাবশালী নেতার মালিকানাধীন। অভিযোগে নাম উঠেছে তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের এক সম্পাদক তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের খাদ্য সরবরাহ কর্মাধ্যক্ষ শাহানুর মণ্ডলের। অভিযোগ, তাঁর প্রভাবেই সরকারি জমিতে অবাধে গড়ে উঠেছে এই নির্মাণ। অভিযোগের পক্ষে সেচ দফতরের তরফে একটি অভ্যন্তরীণ রিপোর্টও আদালতে পেশ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেই রিপোর্টে ইছামতীর পাড়ে বেশ কয়েকটি নির্মাণকে বেআইনি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, টাকি দীর্ঘদিন ধরেই নদী, প্রকৃতি ও শান্ত পরিবেশের জন্য পরিচিত। প্রতিবছর হাজারো মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন, বিশেষত শীতকালে পর্যটকদের ভিড় জমে। পর্যটনকে ঘিরে ব্যবসাও বাড়ছে, তবে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অনিয়ম। পরিবেশবিদদের মতে, অবাধে হোটেল-রিসর্ট গজিয়ে ওঠার ফলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় পরিবেশ। এই সপ্তাহেই মামলার শুনানি শুরু হতে পারে হাইকোর্টে। বেআইনি নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ আসবে নাকি প্রশাসনকে কড়া জবাবদিহি করতে হবে, সেই সিদ্ধান্তের দিকেই এখন তাকিয়ে টাকির বাসিন্দা, পর্যটন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে রাজ্য রাজনীতি পর্যন্ত সকলে।