হুগলির খানাকুলের বন্দাইপুর গ্রামে এক পরিবারের উপর নেমে এসেছে সামাজিক বয়কটের নিদান। অভিযোগ, বাড়ির সামনে বেআইনি নির্মাণের প্রতিবাদ জানানো এবং আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কারণেই তৃণমূল নেতার নির্দেশে গ্রামে একঘরে করে দেওয়া হয়েছে তাঁদের। শুধু তাই নয়, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই পরিবারকে গ্রামে কার্যত সমাজচ্যুত অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই আরামবাগ মহকুমাজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: বেআইনিভাবে নির্মাণ, নিউ টাউনে ২৬ তলা টাওয়ার ভাঙার নির্দেশ হাইকোর্টের
পরিবারের প্রধান রঞ্জিত মণ্ডল জানান, প্রায় তিন বছর আগে গ্রামের মাতব্বরদের সঙ্গে তাঁর বিবাদ বাঁধে। বিষয়টি ছিল রাস্তা আটকে দেওয়া বেআইনি নির্মাণকে ঘিরে। তিনি প্রতিবাদ করলে সমস্যার সমাধান না হয়ে উল্টে তাঁর পরিবারকেই নিশানা করা হয়। শেষমেশ আদালতের দ্বারস্থ হন রঞ্জিত। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন। কিন্তু আদালতের পথে যাওয়ার জেরেই তাঁদের উপর নেমে আসে গঞ্জনার পাহাড়।
অভিযোগ, তৃণমূল নেতা তথা খানাকুল ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সহসভাপতি অশোক কোল স্থানীয় মাতব্বরদের সঙ্গে নিয়ে ঘোষণা করেন, গ্রামের কেউ রঞ্জিতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে দিতে হবে ১০ হাজার টাকা জরিমানা। এরপর থেকেই গ্রামবাসীরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেন। এমনকী জমিতে চাষাবাদ করতেও বাধা দেওয়া হয়। সরকারি টিউবওয়েল থেকে জল সংগ্রহেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।
রঞ্জিতের মা সুষমা মণ্ডলের অভিযোগ, তাঁদের বাথরুম পর্যন্ত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। চাষ করতে দিচ্ছে না। কেউ কথা বললে তাঁকেই জরিমানা দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। এতটাই ভয়ে থাকেন যে রাতে বাড়িতে থাকা যায় না। রঞ্জিত নিজেও জানান, আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন বলেই এই পরিস্থিতি। থানায় জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।
পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, তাঁরা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে গিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু এতদিনেও কোনও সুরাহা মেলেনি। বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও ছোট সন্তানকে নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন রঞ্জিত। অভিযুক্ত অশোক কোলের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে তৃণমূল পরিচালিত খানাকুল ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির বর্তমান সহসভাপতি মিন্টু পাল বলেন, ঘটনার বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। বয়কট করাকে তৃণমূল সমর্থন করে না। যদি সত্যিই এমন কিছু হয়ে থাকে, উপরমহলে জানানো হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে শাসক দলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপি। দলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্ব বলেন, বাংলায় মধ্যযুগীয় বর্বরতার চিত্র দেখা যাচ্ছে। কারও যদি ভিন্ন মত থাকে বা বিজেপি-ঘনিষ্ঠ হয়, ট্যাঙ্কে লক্ষ্য করে অত্যাচার চালানো হচ্ছে। বন্দাইপুরের এই পরিবারকে অবিলম্বে সামাজিক বয়কট থেকে মুক্ত করা হোক।