বেআইনি নির্মাণ নিয়ে কড়া নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। নিউ টাউনের একটি বহুতল নির্মাণকে বেআইনি বলে ঘোষণা করে তা ভেঙে ফেলার কড়া নির্দেশ দিল। ওই বহুতলটি ২৬ তলার। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা ও বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, নিউটাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ)-র অনুমোদনে তৈরি হওয়া ২৬ তলা ওই টাওয়ার আইনসিদ্ধ নয়। সেই সঙ্গে প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে জড়িত আধিকারিকদের বিরুদ্ধে স্টেট ভিজিল্যান্স কমিশনকে বিভাগীয় এবং ফৌজদারি তদন্ত চালানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে ছাত্রীর মৃত্যুতে ময়নাতদন্তের ফুটেজ সংগ্রহের নির্দেশ
ঘটনার সূত্রপাত ২০০৭ সালে। কেপ্পেল ম্যাগনাস প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংস্থা নিউ টাউনে ১৫টি টাওয়ার নিয়ে একটি আবাসন প্রকল্প শুরু করে। প্রতিটি টাওয়ার ছিল ২৩ তলা বিশিষ্ট এবং মোট ১২৭৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে সংস্থাটি পুরো প্রকল্পটি ‘এলিটা গার্ডেন ভিস্তা প্রজেক্টস’-এর হাতে বিক্রি করে দেয়। সেখান থেকেই শুরু হয় বিতর্ক। অভিযোগ, নতুন মালিক সংস্থা এনকেডিএর কাছ থেকে বাড়তি অনুমোদন নিয়ে ১৬ নম্বর একটি টাওয়ার গড়ে তোলে, যার উচ্চতা ২৬ তলা এবং ফ্ল্যাট সংখ্যা ২৩৩।
এই অতিরিক্ত টাওয়ার ঘিরেই আদালতের দ্বারস্থ হন বাকি ১৫ টাওয়ারের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, ওই উঁচু ভবনের কারণে তাঁদের ফ্ল্যাটে সূর্যের আলো ও হাওয়া প্রবাহ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁরা দাবি করেন, মূল অনুমোদন অনুযায়ী প্রকল্পে ১৫টির বেশি টাওয়ার থাকার কথা নয়। অতএব, এনকেডিএ যে ছাড়পত্র দিয়ে ১৬ নম্বর টাওয়ার তৈরি করতে দিয়েছে, তা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং তাঁদের মতামতও নেওয়া হয়নি।
দীর্ঘ শুনানির পর শুক্রবার রায়ে আদালত জানায়, ক্রেতারা ২০০৭ সালের অনুমোদিত শর্ত মেনেই ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। পরবর্তীতে নতুন টাওয়ার যুক্ত করা হলে তা তাঁদের প্রতি প্রতারণার শামিল। শুধু আর্থিক ক্ষতিপূরণ যথেষ্ট নয়, বেআইনি নির্মাণকেই সরাতে হবে। আদালতের নির্দেশ, আগামী দুই মাসের মধ্যে ২৬ তলা টাওয়ারটি ভেঙে ফেলতে হবে। পাশাপাশি, ওই টাওয়ারের ফ্ল্যাট ক্রেতাদের তাঁদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ৭ শতাংশ সুদসহ ফেরত দিতে হবে নির্মাণ সংস্থাকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, এনকেডিএর সেই সব আধিকারিকদের বিরুদ্ধেও তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাঁরা বেআইনি অনুমোদনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি ফৌজদারি মামলার ভিত্তিতেও তদন্ত হবে বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট।