মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতিতে ধাক্কা খেল বসিরহাটের চিংড়ি রফতানি। এতদিন যেখানে ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতীয় চিংড়ি আমেরিকার বাজারে পৌঁছত, সেখানেই ২৭ অগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে দ্বিগুণ অর্থাৎ ৫০ শতাংশ শুল্ক। এর জেরে চিংড়ি ব্যবসায়ীরা কার্যত রফতানি বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলত মৎস্যজীবী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্যাকেজিং শ্রমিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত কয়েক লক্ষ মানুষের জীবিকাই এখন টালমাটাল। (আরও পড়ুন: 'বিশ্বে পরিবর্তন আসছে...', বৈঠকে মোদীকে বড় বার্তা চিনা জিনপিংয়ের)
আরও পড়ুন: ট্যারিফ দ্বন্দ্বে মোদী সরকারকে 'অনমনীয়' অবস্থান পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান প্রাক্তন আমলার
ভারত থেকে আমেরিকায় মোট ২২ ধরনের পণ্য রফতানি হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ জুড়ে রয়েছে চিংড়ি। বসিরহাট একাই দেশের মোট চিংড়ি রফতানির প্রায় এক-চতুর্থাংশ যোগান দেয়। বসিরহাট মহকুমার মালঞ্চ, হাসনাবাদ, ত্রিমোহিনী, সরবেড়িয়া ও আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বাগদা, গলদা ও ভেনামি চিংড়ির চাষ ও রফতানির উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে বিশাল অর্থনীতি। প্রতি সপ্তাহেই কয়েকশো কোটি টাকার চিংড়ি রফতানি হত আমেরিকায়। এখন শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় সেই রফতানিই থমকে গিয়েছে। একজন স্থানীয় রফতানিকারী জানান, সবচেয়ে বড় বাজার আমেরিকা। ৫০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে সেখানে চিংড়ি পাঠানো সম্ভব নয়। বাধ্য হয়ে এখন কম দামে খোলা বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাতে ব্যবসা তো বাঁচছেই না, উল্টে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। (আরও পড়ুন: 'ভারত কারও নির্দেশে চলে না', ট্রাম্প ঘনিষ্ঠের 'মোদীর যুদ্ধ' মন্তব্যের পালটা জবাব)
আরও পড়ুন: ট্যারিফ দ্বন্দ্বে ভারতকে 'অনমনীয়' অবস্থান পুনর্বিবেচনার আহ্বান প্রাক্তন আমলার
এরফলে শ্রমিকরাও বিপাকে। চিংড়ি প্যাকেজিংয়ের সঙ্গে যুক্ত এক শ্রমিকের কথায়, রফতানি বন্ধ হওয়ায় আগের মতো কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। মাছ তোলা-নামানো, প্যাকেট সিল করা এই কাজগুলো করেই সংসার চলত। এখন কাজ বন্ধ হলে না খেয়ে মরতে হবে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, বসিরহাটে এই খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাঁচ থেকে আট লক্ষ মানুষ জড়িত। আমেরিকায় আগে ভারতীয় চিংড়ির উপর শুল্ক ছিল মাত্র ৮.২ শতাংশ, পরে তা বেড়ে ২৫ শতাংশে দাঁড়ায়। আর সর্বশেষ সিদ্ধান্তে তা হয়েছে ৫০ শতাংশ। একই সময়ে ভারতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইকুয়েডরকে মাত্র ১৫ শতাংশ শুল্কে ছাড় দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। ফলে বাজারে ইকুয়েডরই এগিয়ে যাচ্ছে, আর ভারতীয় রফতানিকারীরা পড়ছেন কঠিন সংকটে।
এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, বসিরহাটের প্রান্তিক মানুষের অন্যতম আয়ের উৎস চিংড়ি চাষ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন শুল্ক নীতি মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর সরাসরি আঘাত হানবে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের জরুরি উদ্যোগ নেওয়া উচিত। স্থানীয় প্রশাসনেরও বিষয়টি নজরে এসেছে। যদিও বসিরহাট মহকুমাশাসক আশিস কুমারের কাছ থেকে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবু ব্যবসায়ীদের আশা, ভারত সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।