পথ কুকুর নিয়ে সুপ্রিম নির্দেশ দেশজুড়ে তুমুল চর্চা শুরু হয়েছে। সেই আবহে পশ্চিমবঙ্গ অন্য পথে হেঁটে পথ কুকুরের কামড় নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। রাজ্যের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসে কুকুরের কামড়ের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর নেপথ্যে রয়েছে রাজ্য সরকারের ধারাবাহিক নির্বীজকরণ ও দত্তকগ্রহণ কর্মসূচি।
আরও পড়ুন: পশুপ্রেমীদের জয়! বন্ধ্যাত্বকরণের পর মুক্ত পথ কুকুররা, SC-র বিশেষ নির্দেশ
গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা, হাওড়া ও বিধাননগর পুরসভা এলাকাকে কেন্দ্র করে এই কর্মসূচি কার্যকর হয়েছে। প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতর থেকে এক কোটি টাকার আর্থিক সহায়তায় পুরসভাগুলি নিয়মিত নির্বীজকরণ করছে, আর তার ফলেই রাস্তার কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আসছে। পাশাপাশি দত্তকগ্রহণ কর্মসূচির ফলে বহু সারমেয় নতুন আশ্রয় পাচ্ছে, যা মানুষ ও প্রাণীর সহাবস্থানকে সহজ করেছে। সরকারি পরিসংখ্যানই এর প্রমাণ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত রাজ্যে কুকুরের কামড়ে জখমের সংখ্যা ১০ হাজার ২৬৪। গত বছর একই সময়ে সেই সংখ্যা ছিল ৭৬ হাজার ৪৮৬। অর্থাৎ মাত্র এক বছরে প্রায় সাতগুণ হ্রাস পেয়েছে এই ঘটনা।
প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, নিয়মিত নির্বীজকরণ ও দত্তকগ্রহণ কর্মসূচির ফলেই পরিস্থিতি বদলেছে। সরকার চায় মানুষ ও কুকুর দু’পক্ষই নিরাপদ থাকুক। এখনকার সাফল্য সেই লক্ষ্যপূরণের দিকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গ আসলে একটি স্থায়ী সমাধানের পথের দিশা দেখিয়েছে। নিধন বা জোর করে তাড়িয়ে দেওয়ার বদলে, নিয়ন্ত্রিত প্রজনন এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়েছে। তাঁদের মতে, এই অভিজ্ঞতা কেরল, মহারাষ্ট্র বা দিল্লির মতো রাজ্যেও প্রয়োগ করা গেলে কার্যকর পরিবর্তন আসতে পারে। কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ জানিয়েছেন, দেশে একমাত্র কলকাতা পুরসভাতেই পথকুকুরদের জন্য আলাদা বিভাগ আছে। শহরে জলাতঙ্ক রোধের জন্য ১৯টি কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০টি কুকুরের নির্বীজকরণ করা হয়। কুকুরকে সমাজের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েই পুরসভা কাজ করছে।
তবে চ্যালেঞ্জও রয়ে গিয়েছে। রাজ্যের প্রাণীসম্পদ বিকাশমন্ত্রী স্বপন দেবনাথের মতে, নির্বীজকরণ কর্মসূচি চলাকালীন অনেক এলাকায় স্থানীয় মানুষ বাধা দেন। তিনি বলেন, এখনও অনেকেই ভুল বোঝেন। কুকুর ধরতে গেলে কাজের লোকজনকে গালিগালাজ করা হয়। মানুষের সচেতনতা আরও বাড়ানো জরুরি, যাতে মানুষ এবং কুকুরের সহাবস্থানের ভারসাম্য বজায় থাকে।