দেশজুড়ে প্রবল সমালোচনার মধ্যে পথ কুকুরদের নিয়ে আগের রায় পরিবর্তন করল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, সব পথ কুকুরকে রাস্তা থেকে সরিয়ে শেল্টার হোমে পাঠানো হবে না। টিকা দেওয়ার পরে পথ কুকুরদের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে এবং একই এলাকায় ফেরত পাঠানো যেতে পারে।তবে প্রকাশ্য রাস্তায় আর পথ কুকুরদের খাওয়ানো যাবে না।অর্থাৎ, আগে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তা খানিকটা শুধরে পর্যালোচনা করে রায় দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিক্রম নাথ, সন্দীপ মেহতা ও এনভি আঞ্জারিয়ার বেঞ্চ জানিয়েছে, এর আগে দুই বিচারপতির বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা স্থগিত রাখা হল। শীর্ষ আদালত বলেছে, পথকুকুরদের দিল্লির রাস্তা থেকে নির্দিষ্ট আশ্রয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে।এই কাজে কোনও ভাবেই বাধা দেওয়া যাবে না। সেখানে সঠিক পদ্ধতিতে পথ কুকুরদের জীবাণুকরণ প্রতিষেধক এবং বন্ধ্যাত্বকরণ টিকা দেওয়ার পর, আবার যে জায়গার কুকুর, সেই এলাকাতেই ছেড়ে দেওয়া হবে। অন্তত ৫ হাজার পথ কুকুরের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র তৈরির নির্দেশ দিয়েছে তিন সদস্যের বিচারপদের বেঞ্চ।ব্যক্তিক্রম হিসেবে, হালমা চালাতে পারে, অর্থাৎ হিংস্র কিংবা জলাতঙ্ক ঘটাতে পারে, এমন কুকুরদের ছাড়া যাবে না। তাদের আশ্রয়কেন্দ্রেই রেখে দিতে হবে। আর রাস্তায় ফেরানো যাবে না। আদালত আরও জানিয়েছে, প্রকাশ্য রাস্তায় আর পথ কুকুরদের খাওয়ানো যাবে না। পরিবর্তে প্রশাসনকে এর দায়িত্ব নিতে হবে। দিল্লি এবং আশপাশের এলাকায় পুরসভা ধরে ধরে পথ কুকুরদের খাওয়ানোর স্থান নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। এরপরেও যাঁরা রাস্তায় খাবার দেবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হতে পারে। এই বিষয়ে অভিযোগ জানানোর জন্য হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হবে। কোনও পশুপ্রেমী যদি রাস্তার কোনও কুকুরকে পোষ্য হিসাবে গ্রহণ করতে চান, দিল্লি পুরসভায় আবেদন জানাতে পারবেন।
আরও পড়ুন-'যা হওয়ার হয়ে গেছে!' আহমেদাবাদ স্কুলে হত্যাকাণ্ডে ভাইরাল অভিযুক্ত পড়ুয়ার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট
সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, কারা রাস্তা থেকে কুকুর ধরবেন, কী ভাবে আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়িত হবে, পর্যাপ্ত কর্মী আছেন কিনা, তা নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষকে হলফনামা দাখিল করতে হবে।পাশাপাশি আদালত এই মামলার পরিধি দিল্লি-এনসিআর ছাড়িয়ে সমগ্র ভারত জুড়ে প্রসারিত করেছে। সমস্ত রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং বিভিন্ন পশুপালন কেন্দ্রগুলিকে এই মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। আদালত আরও বলেছে, এই বিষয়ে একটি জাতীয় নীতি প্রণয়নের জন্য বিভিন্ন হাইকোর্টে বিচারাধীন একই ধরণের আবেদনগুলি সুপ্রিম কোর্টে স্থানান্তর করা হবে।আট সপ্তাহ পর ফের এই মামলার শুনানি হবে।
আরও পড়ুন-'যা হওয়ার হয়ে গেছে!' আহমেদাবাদ স্কুলে হত্যাকাণ্ডে ভাইরাল অভিযুক্ত পড়ুয়ার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট
এর আগে, ১১ আগস্ট শীর্ষ আদালত নির্দেশ দেয় দিল্লি-এনসিআরের সব পথ কুকুরকে রাস্তা থেকে সরিয়ে নিতে হবে বাধ্যতামূলক ভাবে। এমনকী, এই কার্যক্রমে বাধা দিলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে দিল্লিতে কুকুরের কামড়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এবং রেবিস আক্রান্ত হয়ে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটায় এই নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।শীর্ষ আদালত সাফ জানায়, কেউ যদি এই কার্যক্রমে বাধা দেয়, তাকে কোর্টের অবজ্ঞার জন্য কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বলা হয়, ‘পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর, দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্রুত যেন পথ কুকুর ধরতে শুরু করা হয়। তাদের যদি বিশেষ বাহিনী গঠন করতে হয়, সেটা করুক। তবে এটা প্রথম ও প্রধান কাজ হতে হবে যাতে সমস্ত এলাকা পথ কুকুর মুক্ত হয়।' অন্যদিকে, শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশকে ‘অবৈজ্ঞানিক’ বলে জানিয়েছে পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিম্যালস (পেটা)। ওই নির্দেশের পর থেকে, দেশজুড়ে বিক্ষোভ দেখান পশুপ্রেমী-সাধারণ মানুষ।তারপরেই বিষয়টি প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে।