কৃষ্ণনগর খুন কাণ্ডের তদন্তে বড় সাফল্য পেল পুলিশ। যেকোনও অপরাধ খুনের তদন্তে সবথেকে বড় কাজ হল প্রমাণ জোগাড় করা। নয়ত আসল অপরাধীকে ধরেও আদালতে তার দোষ প্রমাণ করা যাবে না। এই আবহে খুনের মামলায় হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রমাণ। এবং কৃষ্ণনগর কাণ্ডে অবশেষে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, ঈশিতা মল্লিক খুনে যে সেভেন এমএম পিস্তলটি দেশরাজ সিং ব্যবহার করেছিল বলে দাবি করা হচ্ছে, তা উদ্ধার করেছে পুলিশ। দেশরাজকে নিয়ে গিয়েই সেই অস্ত্র উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। পিস্তলটি ফরেনসিক ও ব্যালিস্টিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রিপোর্ট অনুযায়ী, কৃষ্ণনগর স্টেশন সংলগ্ন একটি ডোবাতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল সেই বন্দুকটি। শুক্রবার রাতে জেরার পরে দেশরাজ ওই অস্ত্রের হদিশ দেয়। এরপর তাকে নিয়ে তদন্তকারীরা সেই ডোবায় যান তদন্তকারীরা। তল্লাশি অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রটি। জানা গিয়েছে, জেরায় পুলিশকে ঠিক ঠিক জবাব দিকে 'ঘুষ' চেয়েছিল দেশরাজ। সে নাকি রুটি-মাংস খেতে চেয়েছিল। তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা দেশরাজের সেই কথা মেনে রুটি-মাংস নিয়ে আনেন। সেই খাবার খেয়েই অস্ত্রের হদিশ দেয় দেশরাজ।
উল্লেখ্য, গত ২৫ অগস্ট দুপুরে কৃষ্ণনগরে ঈশিতাকে তাঁর বাড়িতে ঢুকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে মাথায় গুলি করে খুন করেছিল দেশরাজ। উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়ায় ভাড়াবাড়িতে মা-বোনের সঙ্গে থাকত দেশরাজ। অভিযোগ, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ঈশিতাকে খুন করেছিল দেশরাজ। আর খুন করেই সে পালায়। এদিকে দেশরাজের দুই আত্মীয় দঙ্গল সিংহ ও মঙ্গল সিংহের বিরুদ্ধে খুন-সহ প্রায় ৪০টি অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে দেশরাজের দাদু সরযূপ্রসাদ সিং আবার গোরক্ষপুরের দাপুটে 'মুখিয়া'। এই আবহে দেশরাজ সেখানে থাকতে পারে বলে মনে করছিল পুলিশ। সেই মতো অভিযানও চালানো হচ্ছিল। এরই মাঝে ধরা পড়ে দেশরাজের মামা। খুনের পর এই মামাকেই ফোন করেছিল দেশরাজ। মামা তাকে পালাতে সাহায্য করেছিল বলেও অভিযোগ। সেই মামা ধরা পড়ের পরেই অবশেষে ধরা পড়ে মূল অভিযুক্তও।
৩০ অগস্ট গোরক্ষপুরের দেওরিয়া শহরের কাছে শুক্রবার রাতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে এক যুবককে আটক করেছিল কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশের টিম। ধৃতের সঙ্গে দেশরাজের খুড়তুতো ভাই নীতিনপ্রতাপের সরাসরি যোগাযোগ ছিল বলে দাবি করা হয়। খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র জোগানোর পিছনেও ওই যুবকের ভূমিকা ছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হাতে পেয়েছিল পুলিশ। আর এখন তদন্ত গুটিয়ে আনতে একে একে দাবার ঘুঁটির মতো প্রমাণ সাজাচ্ছে পুলিশ।