তৃণমূল কংগ্রেসের ‘ভাষা আন্দোলনে’র মঞ্চ খোলার ইস্যুতে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে অবস্থান বিক্ষোভ করেছেন প্রাক্তন সেনাকর্মীদের একাংশ।আর সেই ধর্না মঞ্চে দল বেঁধে হাজির হন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী- সহ অর্জুন সিং, তাপস রায়, তমোঘ্ন ঘোষ, শঙ্কুদেব পণ্ডার মতো রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতারা। শুধু তাই নয়, গলায় গেরুয়া জড়িয়ে ইতিউতি ভিড়ে দেখা গিয়েছে বিজেপি কর্মীদেরও। এরপরেই প্রাক্তন সেনা আধিকারিকদের সভায় অংশগ্রহণ করে আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করেছেন বলে শুভেন্দু অধিকারীকে সতর্ক করেছে কলকাতা হাইকোর্ট।স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে বিজেপিকে পাল্টা তোপ দেগেছে তৃণমূল কংগ্রেসও।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের বিরুদ্ধে অবস্থানে বসতে চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রাক্তন সেনা আধিকারিকদের একাংশ। বুধবার তীর্থঙ্কর বিচারপতি ঘোষ তাঁদের শর্তসাপেক্ষে ধর্নায় বসার অনুমতি দেন। আদালত জানায়, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেয়ো রোডে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ধর্না চলতে পারে। তবে বিজেপির কোনও পদাধিকারী ওই কর্মসূচিতে থাকতে পারবেন না। কিন্তু বৃহস্পতিবার ধর্নায় উপস্থিত হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে তিনি তীব্র আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রীকে। শুভেন্দু বলেন, 'সেনা আপনাকে দেখে পালায়নি, আপনি সেনাকে দেখে মেয়ো রোড থেকে পালিয়ে ডোরিনা ক্রসিং গেছেন।' এছাড়া তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে দেশবিরোধী ও সেনা বিরোধী আখ্যা দেন।এরপরই বিভিন্ন মহল প্রশ্ন তোলে, আদালতের শর্তে যেখানে রাজনৈতিক নেতা উপস্থিত থাকতে পারতেন না, সেখানে শুভেন্দু কীভাবে ধর্নায় উপস্থিত হলেন?
এই নিয়েই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা গড়িয়েছে। শুভেন্দুর আইনজীবী আদালতে জানান, বিরোধী দলনেতা হাইকোর্টের নির্দেশের বিষয়টি জানতেন না। শুভেন্দু মঞ্চের উপর ওঠেননি বলেও জানান তাঁর আইনজীবী। তারপরে শুভেন্দুকে সতর্ক করেন বিচারপতি ঘোষ।শুভেন্দুর উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, 'ভবিষ্যতে যদি কোর্টের নির্দেশ অবমাননা করেন, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।' অন্যদিকে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছিলাম, ওই কর্মসূচি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পলিটিক্যালি স্পনসর্ড। ওঁরা মঞ্চে গিয়ে সেটাকেই ‘সত্যি’ বলে প্রমাণ করে দিলেন।' কুণালের কটাক্ষ, ‘সেনার প্রতি আমাদের পূর্ণ সম্মান আছে। কিন্তু যে পদ্ধতিতে অবসরপ্রাপ্ত সেনাদের একাংশ বলে একেবারেই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে কোনও কর্মসূচি করা হচ্ছে বা প্রচারে যাওয়া হচ্ছে এবং সেখানে যারা উৎসাহ দিচ্ছেন, সেই রাজনৈতিক দলের নেতারা যাবেন, এটা তো খুব প্রত্যাশিত। এটা তো রাজনৈতিক-ই।’ তাঁর কথায়, ‘কে টেকনিক্যালি কোন পোস্টে আছেন, সেটা অন্য কথা। আমরা বলছিলাম, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আজ তো প্রমাণ হয়ে গেল যে ওটা একটা রাজনৈতিক দলের গণসংগঠনের মতো মঞ্চ বেঁধে বসে আছে।'
ঘটনার সূত্রপাত
বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার এবং বাংলা ভাষার অপমানের প্রতিবাদে গান্ধীমূর্তির সামনে নানা কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছিল তৃণমূল। সেই মতো মঞ্চও বেঁধেছিল বাংলার শাসকদল। কিন্তু সেই প্রতিবাদমঞ্চ খুলে দেন জওয়ানেরা। সেনা দাবি করে, দু’দিনের অনুমতি থাকলেও ময়দান এলাকায় মঞ্চটি প্রায় এক মাস ধরে বাঁধা ছিল। অস্থায়ী ওই কাঠামো সরিয়ে দেওয়ার জন্য আয়োজকদের বেশ কয়েকবার জানানো হয়। কিন্তু তারপরও তা সরানো হয়নি বলে জানায় সেনা। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি ছিল, মঞ্চ সরানোর বিষয়ে কারও সঙ্গে কথা বলা হয়নি।এরপরেই প্রাক্তন সেনা কর্মীদের অভিযোগ তোলেন, মুখ্যমন্ত্রী সেনাদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেছে। তার প্রতিবাদে তাঁরা ধর্না দিতে চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের সেই অনুমতি দেয়নি। এরপর প্রাক্তন সেনাকর্মী এন মোহন রাও কর্মসূচি করতে চেয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, রাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ব্যক্তির কাছ থেকে ওই ধরনের মন্তব্য অপমানজনক। যা ভারতীয় সেনাবাহিনীর মর্যাদা, সম্মানে আঘাত করে।