এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ যাতে না হয়, তা নিয়ে প্রথম থেকেই সরব হয়েছিলেন হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। আ আজ যখন ম্যাচটি হতে চলেছে, তার আগে সকালেও বিজেপি এবং বিসিসিআইকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ শানালেন এআইএমআইএম প্রধান। মোদীকে উদ্দেশ্য করে ওয়াইসি বলেন, 'আপনি বলেছিলেন, রক্ত আর জল একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না। যদি আলোচনার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ একসঙ্গে চলতে না পারে, তাহলে ক্রিকেট থেকে বিসিসিআই যে হাজার হাজার কোটি টাকা আয়ের পরিকল্পনা করছে, তার চেয়ে ২৬ জন নাগরিকের জীবন কি কম গুরুত্বপূর্ণ?' সেই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন করেন, 'অসমের মুখ্যমন্ত্রী, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এবং সমস্ত বিজেপি নেতাদের বলছি, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে অস্বীকার করার ক্ষমতা আপনাদের নেই তো?'
ওয়াইসি আরও বলেন, '২৬ জন সাধারণ নাগরিককে ধর্ম জিজ্ঞাসা করে গুলি করা হয়েছিল। যদি আপনার পরিবারের কারুর মৃত্যু হত তাহলে কি আপনি পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচকে সমর্থন করতে পারতেন? আমরা গতকালও নিহতদের পরিবারের পাশে ছিলাম, আজও আছি এবং আগামীকালও থাকব। পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলার সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক সেই প্রশ্ন তুলে তিনি সরকারের কাছে স্পষ্ট জানতে চান, কয়েক হাজার কোটি টাকার আর্থিক লাভ কি মানুষের প্রাণের চেয়েও বেশি মূল্যবান?'
বিজেপি এবং বিসিসিআইকে ফিক্সচারের অনুমতি দেওয়ার জন্য সমালোচনা করেছেন অন্যান্য বিরোধী নেতারাও। উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল, পাকিস্তানি সন্ত্রাসীরা দক্ষিণ কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বাইসারান তৃণভূমিতে হামলা চালিয়ে ২৬ জন সাধারণ মানুষকে খুন করেছিল। মৃতদের মধ্যে ২৫ জনই পর্যটক ছিলেন। তাদের ধর্ম জিজ্ঞেস করে খুন করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। সেই ঘটনার কয়েক মাস যেতে না যেতেই ভারত এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলায় গর্জে উঠেছে বিরোধীদলগুলি। শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা আদিত্য ঠাকরে বলেছেন, 'রক্তপাত এবং ক্রিকেট একসাথে চলতে পারে না।' অন্যদিকে মহারাষ্ট্র কংগ্রেস এটিকে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত সাধারণ মানুষ এবং জওয়ানদের প্রতি 'অপমান' বলে অভিহিত করেছে।
এদিকে শিবসেনা (ইউবিটি) প্রধান উদ্ধব ঠাকরে মহারাষ্ট্র জুড়ে 'সিঁদুর' বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই ম্যাচ বয়কট করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান গোটা বিশ্বকে জানানোর একটি সুযোগ ছিল ভারতের কাছে। শনিবার মুম্বইয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'যতক্ষণ পর্যন্ত সন্ত্রাস বন্ধ না হয়, ততক্ষণ আমাদের পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত নয়।' বিজেপিকে নিশানা করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, সরকার কি ঘোষণা করতে যাচ্ছে যে অপারেশন সিঁদুর বন্ধ হয়ে গেছে এবং দেশপ্রেমিকদের? এরই সঙ্গে আজকের ভারত-পাক ম্যচটি না দেখার জন্য সকলকে আহ্বান জানান উদ্ধব। তাঁর কথায়, পহেলগাঁও হামলার ক্ষত এখনও তাজা রয়েছে। উদ্ধব বলেন, 'এই ক্রিকেট ম্যাচ জাতীয় অনুভূতির অপমান। আমাদের কি পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা উচিত? যখন আমাদের সেনারা সীমান্তে তাদের জীবন উৎসর্গ করছে, তখন এই ম্যাচ হওয়া উচিত?' দিল্লির প্রাক্তন মন্ত্রী ও আপ নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ দলীয় কর্মীদের সঙ্গে জাতীয় রাজধানীতে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের প্রতীকী পুশপুত্তলিকাও দাহ করেন। সৌরভ ভরদ্বাজ সাংবাদিকদের বলেন, 'পহেলগাঁও হামলায় স্বামীকে হারানো আমাদের মহিলাদের জন্য এই ম্যাচটি চরম অপমানজনক। কিন্তু এখনও আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।'