অপারেশন সিঁদুরে ধ্বংস হওয়া মুরিদকের লস্কর ঘাঁটি নতুন করে গড়ে তোলার তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছ। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার সদর দফতর ছিল এই মুরিদকেতে। সেই মারকাজ তৈয়বার ধ্বংসাবশেষ পুরো ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেখানে একটি নতুন কাঠামো তৈরি করা হবে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই কাঠামো তৈরি করা হবে। এর জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। এর আগে গত ৭ মে পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার জবাব হিসেবে ভারতীয় বায়ুসেনা অপারেশন সিঁদুর চালিয়েছিল। সেই ২৩ মিনিটের অপারেশনেই এই সন্ত্রাসী ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছিল। এই আবহে সেই জঙ্গি ঘাঁটি নতুন করে নির্মাণ করতে শুরু করেছে লস্কর। এর জন্য অগস্ট মাসেই মারকাজ তৈয়বার ধ্বংসাবশেষ গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। গত সপ্তাহে গিয়ে সেই কাজ শেষ হয় বলে জানা যায়। (আরও পড়ুন: ভারত-পাক ম্যাচ নিয়ে তপ্ত রাজনীতি, চাপ বিজেপির ওপর, আরও তীব্র বয়কটের ডাক)
রিপোর্ট অনুযায়ী, ৬-৭ মে-র মধ্যবর্তী রাতে ভারতীয় বায়ুসেনার হামলায় মারকাজে জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কমান্ডারদের বাসস্থানের জন্য ব্যবহৃত দুটি হলুদ বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি একটি লাল দোতলা ভবনও ধ্বংস করা হয়েছিল। গত সপ্তাহে ধ্বংসস্তূপটি ভেঙে ফেলা হলেও ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কারের প্রক্রিয়া এখনও চলছে। রাষ্ট্রসংঘের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার লক্ষ্য, ২০২৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেই একই স্থানে একটি নতুন কাঠামো তৈরি করা। উল্লেখ্য, ৫ ফেব্রুয়ারি হল পাকিস্তান সরকারের ঘোষিত তথাকথিত 'কাশ্মীর সংহতি দিবস'। গত বছর এই দিবস উপলক্ষেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পাকিস্তানি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির পাশাপাশি হামাস নেতাদের দেখা গিয়েছিল ভাষণ দিতে।
মারকাজ তৈয়বার পরিচালক মৌলানা আবু জার এবং লস্কর-ই-তৈয়বার কমান্ডার ইউনুস শাহ বুখারির তত্ত্বাবধানে এই ভেঙে পড়া কাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ চালানো হয়েছিল। এখানেই ফের সন্ত্রাসবাদী কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। হামলার পর, লস্কর-ই-তৈয়বার বেঁচে থাকা অবশিষ্ট জঙ্গিদের সাময়িকভাবে বাহাওয়ালপুরের মারকাজ আকসায় স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। জুলাইয়ের মধ্যে আবদুল রশিদ মহসিনের নেতৃত্বে প্রশিক্ষণ এবং থাকার ব্যবস্থা করা হয় কাসুর জেলার মারকাজ ইয়ারমুকে। এই আবদুল হল লস্কর-ই-তৈয়বার উপ-প্রধান সাইফুল্লাহ কাসুরির ঘনিষ্ঠ সহযোগী। পাকিস্তান সরকার মারকাজ তৈয়বার পুনর্নিমাণের জন্য ৪ কোটি পাকিস্তানি রুপি বরাদ্দ করেছে। যদিও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার অনুমান অনুযায়ী ১৫ কোটি রুপি প্রয়োজন এই জঙ্গি কেন্দ্র ফের গড়ে তোলার জন্য।
ইন্টেলিজেন্স রিপোর্টে উঠে এসেছে, যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি এখন বন্যা ত্রাণের আড়ালে জঙ্গি ঘাঁটি তৈরির তহবিল সংগ্রহ করছে। লস্কর-ই-তৈয়বার খিদমত-ই-খালাক অনলাইন তহবিল সংগ্রহের প্রচার চালাচ্ছে। এই তহবিল মুরিদকে এবং অপারেশন সিঁদুরে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য শিবির পুনর্নির্মাণে ব্যয় করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এভাবে একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের আড়ালে জঙ্গি ঘাঁটির জন্য অর্থ সংগ্রহের কৌশলটি নতুন নয়। ২০০৫ সালে পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর লস্কর-ই-তৈয়বা, জামাত-উদ-দাওয়ার ফালাহ-ই-ইনসানিয়াত কোটি কোটি টাকা অনুদান সংগ্রহ করেছিল। পরে তদন্তে জানা যায় যে, এই তহবিলের ৮০ শতাংশই সন্ত্রাসী পরিকাঠামোতে ব্যবহার করা হয়েছিল। কোটলিতে মারকাজ আব্বাস নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল সিংহভাগ টাকা। ২০২৫ সালের মে মাসে ভারতের হামলায় ধ্বংস হয়ে যায় সেই মারকাজও।