এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্যায়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে। বিরোধী দলগুলি দাবি করছে, এই ম্যাচ পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলায় নিহত এবং সীমান্তে প্রাণ হারানো ভারতীয় সেনাদের অপমান। গত ২২ এপ্রিল, পাকিস্তানি সন্ত্রাসীরা দক্ষিণ কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বাইসারান তৃণভূমিতে হামলা চালিয়ে ২৬ জন সাধারণ মানুষকে খুন করেছিল। মৃতদের মধ্যে ২৫ জনই পর্যটক ছিলেন। তাদের ধর্ম জিজ্ঞেস করে খুন করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। সেই ঘটনার কয়েক মাস যেতে না যেতেই ভারত এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলায় গর্জে উঠেছে বিরোধীদলগুলি।
এই আবহে শিবসেনা (ইউবিটি) প্রধান উদ্ধব ঠাকরে মহারাষ্ট্র জুড়ে 'সিঁদুর' বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই ম্যাচ বয়কট করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান গোটা বিশ্বকে জানানোর একটি সুযোগ ছিল ভারতের কাছে। শনিবার মুম্বইয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'যতক্ষণ পর্যন্ত সন্ত্রাস বন্ধ না হয়, ততক্ষণ আমাদের পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত নয়।' বিজেপিকে নিশানা করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, সরকার কি ঘোষণা করতে যাচ্ছে যে অপারেশন সিঁদুর বন্ধ হয়ে গেছে এবং দেশপ্রেমিকদের? এরই সঙ্গে আজকের ভারত-পাক ম্যচটি না দেখার জন্য সকলকে আহ্বান জানান উদ্ধব। তাঁর কথায়, পহেলগাঁও হামলার ক্ষত এখনও তাজা রয়েছে। উদ্ধব বলেন, 'এই ক্রিকেট ম্যাচ জাতীয় অনুভূতির অপমান। আমাদের কি পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা উচিত? যখন আমাদের সেনারা সীমান্তে তাদের জীবন উৎসর্গ করছে, তখন এই ম্যাচ হওয়া উচিত?'
এদিকে দিল্লির প্রাক্তন মন্ত্রী ও আপ নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ দলীয় কর্মীদের সঙ্গে জাতীয় রাজধানীতে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের প্রতীকী পুশপুত্তলিকাও দাহ করেন। সৌরভ ভরদ্বাজ সাংবাদিকদের বলেন, 'পহেলগাঁও হামলায় স্বামীকে হারানো আমাদের মহিলাদের জন্য এই ম্যাচটি চরম অপমানজনক। কিন্তু এখনও আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।' পরে এক্স-এ একটি পোস্ট করে তিনি লেখেন, 'পাকিস্তানের ক্রিকেট খেলোয়াড়রা আমাদের বিধবাদের এমন নোংরা, ঘৃণ্য ভাবে উপহাস করেছিল এবং আমরা তাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলব। বিজেপি সরকারের জন্য লজ্জা লাগে।'
পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় নিহত কানপুরের ব্যবসায়ী শুভম দ্বিবেদীর বিধবা স্ত্রী আয়েশানিয়া ম্যাচ বয়কট করার জন্য জনগণকে আবেদন জানিয়েছেন। পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই সিদ্ধান্তকে 'গভীরভাবে অসংবেদনশীল' বলে বর্ণনা করেছেন এবং ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই) নিহতদের পরিবারের অনুভূতিকে উপেক্ষা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, 'বিসিসিআইয়ের কাছে তাদের শহিদদের কোনও মূল্য নেই। সম্ভবত, তারা নিজেদের কাউকে হারানি বলেই এই মনোভাব।'
এদিকে কংগ্রেস, এনসিপি (শরদ পাওয়ার গোষ্ঠী) এবং এআইএমআইএমের নেতারাও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই ম্য়াচ খেলার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা আবার উদ্ধব ঠাকরেকে পাল্টা জবাব দিয়েছে। তারা বলেছে যে ম্যাচের বিরোধিতা করার কোনও নৈতিক অধিকার তাঁর নেই। সাংসদ ও শিন্ডে সেনার মুখপাত্র নরেশ মাহাস্কে বলেন, 'ক্ষমতার জন্য হিন্দুত্ব ত্যাগ করে পাকিস্তানের প্রশংসা করেছিলেন ঠাকরে। হঠাৎ করে এই ধরনের ম্যাচের বিরোধিতা করতে পারেন না।' এদিকে এনসিপি প্রধান তথা মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার বলেন, খেলা নিয়ে সিদ্ধান্ত যথাযথ ফোরামে নেওয়া হলেও ভিন্ন মতামত থাকাটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, 'দেশের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি। এত বড় দেশে ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে মতভেদ থাকা স্বাভাবিক। কিছু লোক মনে করতে পারেন, যেহেতু দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন রয়েছে, তাই কোনও মিল থাকা উচিত নয়। একই সঙ্গে অন্যরা এই ম্যাচকে সমর্থন করতে পারে।' এদিকে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে বয়কট এশিয়া কাপ ট্রেন্ড করছে। বহু বিজেপি সমর্থক 'এক্স ইনফ্লুয়েন্সার' থেকে প্রাক্তন সেনা কর্তারা এই ম্যাচের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন।