১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট মধ্যরাত। ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু। জন্ম হল স্বাধীন ভারতের। কিন্তু এই দেশটির তখনও কোনও জাতীয় সংগীত ছিল না। অথচ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই বিশেষ গানটি তাঁর বহু আগে থেকেই কংগ্রেসের পরিচিত ছিল। কংগ্রেসের বিভিন্ন অধিবেশনে গাওয়া হত এই গান। কিন্তু জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বাধীনতার সেই মুহূর্তেই স্বীকৃতি পায়নি ‘জনগণমন’। তাহলে কবে স্বীকৃতি পেয়েছিল এই গান? বেশ চমকপ্রদ সেই ইতিহাস।
গানটির ইতিহাস
প্রথমে জেনে নেওয়া যাক এই গানটির ইতিহাস। ১৯১১ সালে ১১ ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গানটি রচনা করেছিলেন বলে মনে করা হয়। গানটির রচনাতারিখ নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। তবে বিতর্ক নেই এই গানটি গাওয়ার দিন নিয়ে। ওই বছর ২৮ ডিসেম্বর কংগ্রেসের অধিবেশনে প্রথম গাওয়া হয়েছিল গানটি। কলকাতায় আয়োজিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ২৬তম বার্ষিক অধিবেশনে গাওয়ার পরের দিনই গানটির ইংরেজি অনুবাদ দ্য বেঙ্গলি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরে ১৯১২ সালের জানুয়ারি মাসে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় ভারত-বিধাতা নামে গানটি প্রকাশিত হয়। কিছুকাল পর রবীন্দ্রনাথ নিজেই গানটির ইংরেজি অনুবাদ করেন।
আরও পড়ুন - স্বাধীনতা দিবসে স্কুলে কিছু বলতে হবে খুদেকে? এটি পাঠ করলেই মুগ্ধ হবেন শিক্ষকরা
জাতীয় সংগীত করার প্রথম প্রস্তাব দেন সুভাষ
‘জনগণমন’-কে জাতীয় সংগীত করার প্রথম প্রস্তাব ১৯৩৭ সালে দিয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। গানটি তাঁর ব্যক্তিগতভাবে ভীষণ প্রিয় ছিল। ১৯৪৩ সালের ৫ জুলাই আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠনের কথা ঘোষণা করলেন তিনি। সেদিন জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হল ‘জনগণমন’।
জাতিসংঘে প্রথম বাজল ‘জনগণমন’
জাতিসংঘে ‘জনগণমন’ গানটি প্রথম বাজানো হয়েছিল ১৯৪৭ সালের পর কোনও এক অনুষ্ঠানে। জাতিসংঘে ভারতের প্রতিনিধিদের থেকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে এমন গান চাওয়া হয়েছিল। তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। স্বাধীনতার পর পুরোদমে শুরু হয়েছিল সংবিধান তৈরির প্রস্তুতি। সেই সংবিধান অনুযায়ী, ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ভারত।
আরও পড়ুন - ব্রিটিশ আর্মির এই সৈনিকই বানান ভারতের জাতীয় পতাকা,চেনেন গান্ধীজির এই অনুগামীকে?
১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি
ভারতের এই আত্মপ্রকাশের ঠিক দুদিন আগে ২৪ জানুয়ারি ‘জনগণমন’-কে জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু গানটির শুধুমাত্র প্রথম স্তবকটিই গীত হবে বলে ধার্য হয়। যা গাইতে সময় লাগে ৫২ সেকেন্ড। অর্থাৎ আসলে স্বাধীনতার তিন বছর পর থেকে ভারতের জাতীয় সংগীতের মর্যাদা পায় ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে ভারত ভাগ্য বিধাতা’।