জগদীপ ধনখড়ের আকস্মিক পদত্যাগের পর মঙ্গলবার হতে চলেছে দেশের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন।একদিকে শাসক দল এনডিএ প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণন, অন্যদিকে বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার প্রার্থী সুদর্শন রেড্ডি মুখোমুখি হতে চলেছেন এই ভোটে। সূত্রের খবর, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ প্রার্থীর জয় একপ্রকার নিশ্চিত। তবে বিরোধীরা চেষ্টা চালাচ্ছে, ভোটের তফাত যাতে ১০০-র তলায় থাকে।
মঙ্গলবার রাতেই স্পষ্ট যাবে কে হবেন ভারতের পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি। সংসদ ভবনে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ভোটগ্রহণ শুরু হবে। চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত৷ সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে ভোটগণনা পর্ব। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোটের অঙ্ক ঠিক থাকলে এনডিএ জোটের প্রার্থী, মহারাষ্ট্রের বর্তমান রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণনের জয় মোটামুটি নিশ্চিত৷ এই নির্বাচনে শাসক-বিরোধী দুই পক্ষেরই নজর মার্জিনের দিকে। তবে, শুধুমাত্র তাতেই যেন সন্তুষ্ট নয় বিজেপি। সংসদের দুই কক্ষ মিলিয়ে রাধাকৃষ্ণনের ৪২৫টি ভোট পাওয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখেছে তারা। কারণ, সকল সংসদ সদস্য গোপন ব্যালটের মাধ্যমে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেন। অর্থাৎ সাংসদরা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ভোট দিতে পারেন, যদিও তারা মূলত দলের মতাদর্শের ভিত্তিতে ভোট দেন। তবে ক্রস-ভোটিংও রয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস এবং তেলাঙ্গানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের ভারত রাষ্ট্র সমিতি অতীতে একাধিকবার বিজেপিকে সমর্থন করেছে।উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালে, জগদীপ ধনখড় তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মার্জিন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। এরমধ্যে ওয়াইএসআর কংগ্রেস এবং তৎকালীন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের বিজু জনতা দলের ভোটও ছিল। ধনখড় প্রায় ৭৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন।তাই এবারও ক্রস-ভোটিং হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২০২৫ সালের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন
বর্তমানে রাজ্যসভার ২৩৯ জন এবং লোকসভার ৫৪২ জন সাংসদ রয়েছেন। সব মিলিয়ে দুই কক্ষের সদস্য সংখ্যা ৭৮৭, প্রত্যেকেই উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন।সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ৩৯৪টি ভোট। তবে আসন সংখ্যার বিচারে সংসদের দুই কক্ষেই এনডিএ-র পাল্লা ভারী রয়েছে। লোকসভায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র দিকে রয়েছেন ২৯৩ সদস্য। অন্যদিকে, রাজ্যসভায় শাসক জোটের পক্ষে রয়েছেন ১২৯ জন। যা মিলিয়ে রাজ্যসভায় কার্যকরী শক্তি হল ২৪০। সেই হিসেবে অঙ্কখাতায় এনডিএ-র দিকে রয়েছে ৪২২ জন সদস্য। এরমধ্যে ওয়াইএসআর কংগ্রেসের ১১ জন সাংসদ সরকার পক্ষের প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। ফলে সব মিলিয়ে ৪৩৩টি ভোট পেতে পারেন রাধাকৃষ্ণন।উল্লেখ্য, বিআরএস-র তিনজন সাংসদ কোন প্রার্থীকে সমর্থন করবেন তা এখনও জানা যায়নি। বিজেডি-র সাতজন সাংসদের সমর্থন কোন দিকে যাবে, তাও নির্ধারিত হয়নি। স্বাতী মালিওয়াল আম আদমি পার্টির রাজ্যসভার সাংসদ। তবে, গত বছর আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ্ত সহায়কের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তোলার পর দলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে মঙ্গলবার নির্বাচনে তাঁর ভোট বড় ফ্যাক্টর হতে পারে।
অন্যদিকে, ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী ৩১৩ জন বিরোধী সাংসদের ভোট পেতে পারেন। তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ফলে আপের ১২ জন সাংসদের ভোট-সহ মোট ৩২৫ জন সাংসদের ভোট পেতে পারেন বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী বি সুদর্শন রেড্ডি।যদিও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আসাদউদ্দিন ওয়াইসি কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন করবেন বলেও জানিয়েছেন।ইন্ডিয়া জোটের উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী সুদর্শন রেড্ডির জন্য ৩০০-র বেশি ভোট টানতে মরিয়া বিরোধীরা। এদিকে, রেড্ডির থেকে ১০০-রও বেশি ভোটে এগিয়ে রাধাকৃষ্ণন৷ ভোটের তফাত যাতে ১০০-র তলায় থাকে, বিরোধীদের চেষ্টা সেরকমই।গণিতশাস্ত্র নির্ভুল শাস্ত্র। অঙ্কের হিসাব বলে, আসন্ন উপরাষ্ট্রপতি ভোটে জয়ী হতে চলেছেন এনডিএ শিবিরের প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণন। তিনিই হতে চলেছে জগদীপ ধনখড়ের উত্তরসূরি।