সূর্যোদয়ের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রামধনুর দেশ। চতুর্থ দিনে আর মাত্র ৬৯ রান করলেই অস্ট্রেলিয়ার দর্পচূর্ণ করে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল জিতে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর তৃতীয় দিনের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা যে সেই জায়গাায় আছে, সেটার নেপথ্যে রয়েছেন এডেন মার্করাম এবং তেম্বা বাভুমা। ২৮৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে দুর্দান্ত শতরান করেন মার্করাম। অপরাজিত আছেন ১০২ রানে। সেইসঙ্গে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে খোঁড়াতে-খোঁড়াতে অপরাজিত ৬৫ রান করেছেন বাভুমা। তৃতীয় উইকেটে তাঁরা অপরাজিত ১৪৩ রান যুক্ত করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ইতিহাসের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।
দশম উইকেটে ৫৯ রান যোগ অজিদের
যদিও শুক্রবার সকালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে পুরোপুরি হতাশায় ডুবিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া। আট উইকেটে ১৪৪ রান নিয়ে খেলতে নেমে ২০৭ রানে পৌঁছে যায়। ১৪৮ রানে নবম উইকেট হারানোর পরে দশম উইকেটে মূল্যবান ৫৯ রান যোগ করেন মিচেল স্টার্ক এবং জোশ হেজেলউড। ১৩৬ বলে ৫৮ রানে অপরাজিত থাকেন স্টার্ক। আর ৫৩ বলে ১৭ রানের ইনিংস খেলেন হেজেলউড। আর তাঁদের সেই জুটির কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকার লক্ষ্যমাত্রাটা দাঁড়ায় ২৮৮ রান।
দ্বিতীয় ইনিংসে খোলসে ঢুকে যাননি প্রোটিয়ারা
সেই রানটা তাড়া করতে নেমে শুরুটা খুব খারাপ করেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ইনিংসে যেমন খোলসে ঢুকে গিয়েছিল, সেখান থেকে বেরিয়ে ইতিবাচক খেলতে থাকে। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে প্রথম দিনে যেমন ছিল, তার থেকে আজ অনেকটাই ব্যাটিং সহায়ক হয়ে ওঠে পিচ। ফলে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের চ্যালেঞ্জ থাকলেও চাপে পড়ে যাননি প্রোটিয়ারা। নয় রানে প্রথম উইকেট হারালেও নিজেদের ঘাড়ে ভয়কে চেপে বসতে দেননি।
অল্পবিস্তর অসমান বাউন্স সামলেই দ্বিতীয় উইকেটে ৬১ রান যোগ করেন মার্করাম এবং উইয়ান মাল্ডার। ৭০ রানে মাল্ডার আউট হওয়ার পরে ক্যাপ্টেন বাভুমার সঙ্গে জুটি বেঁধে প্রোটিয়াদের এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন মার্করাম। বাউন্ডারি এবং দৌড়ে রান নিয়ে ক্রমশ জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রানটা কমিয়ে ফেলতে থাকেন।
আরও পড়ুন: হৃদরোগে আক্রান্ত মা, ভরতি হাসপাতালে, তড়িঘড়ি ইংল্যান্ড থেকে ভারতে ফিরছেন গম্ভীর
ইতিহাস তৈরির নিজের কাঁধে নিলেন বাভুমা
বিশেষত ইনিংসের গোড়ার দিকেই হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়ার পরও খেলে যেতে থাকেন বাভুমা। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল যে দৌড়াতে কষ্ট হচ্ছে। ঠিকমতো দৌড়াতে পাচ্ছেন না। কিন্তু মাঠ থেকে উঠে যাওয়ার বা স্রেফ বাউন্ডারি মারার অপেক্ষায় থাকেননি। বরং ক্যাপ্টেন হিসেবে অগ্নিপরীক্ষা দিতে থাকেন। ফাইনালে এসে দক্ষিণ আফ্রিকার যে হারের রেকর্ড আছে, সেটা মুছে ফেলার চ্যালেঞ্জটা নিজের হাতেই তুলে নেন। পান ভাগ্যেরও সহায়তা। যখন দু'রানে খেলছিলেন, সেইসময় স্লিপে তাঁর সহজ ফস্কে দেন স্টিভ স্মিথ।
আরও পড়ুন: মাত্র ৩৪ বলে সেঞ্চুরি, ১৯ ছক্কায় ক্রিস গেইলদের বিশ্বরেকর্ড ভাঙলেন IPL-এ দল না পাওয়া ক্রিকেটার
সেটার পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করেন প্রোটিয়ারা। বাভুমা এবং মার্করাম মিলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ধাপে-ধাপে ১০০ রান, ১৫০ রান, ২০০ রানের গণ্ডি পার করিয়ে দেন। একটা সময় নাথান লিয়ন, ট্র্যাভিস হেডরা পিচ থেকে ভালোমতো স্পিন আদায় করে নিতে থাকেন। সেটা সামলেই খেলতে থাকেন বাভুমারা। কিন্তু জয়ের জন্য যখন ৮০ রানের মতো বাকি ছিল, তখন মেঘলা হয়ে যায় লর্ডসের আকাশ। তাতেও দমেননি মার্করামরা। শেষপর্যন্ত তৃতীয় দিনের শেষে প্রোটিয়াদের স্কোর দাঁড়িয়েছে দু'উইকেটে ২১৩ রান।
শেষ সেশনে বিনা উইকেটে ১০৯ রান দক্ষিণ আফ্রিকার
আর এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংস কতটা ভালো গিয়েছে, সেটার প্রমাণের জন্য দুটি পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। দ্বিতীয় ইনিংসে নয় ওভারে ৫৩ রান খরচ করেছেন স্টার্ক। আর তৃতীয় সেশনে বিনা উইকেটে ১০৯ রান করেছেন প্রোটিয়ারা। তাঁরা আশা করবেন যে চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনটা যেন এরকম যায়। কারণ আরও একটা হৃদয়ভঙ্গের কষ্ট তাঁরা সইতে পারবেন না।