মহম্মদ রফি তাঁর কেরিয়ারের শীর্ষে থাকাকালীন গান ছেড়ে দিয়েছিলেন। সঙ্গীত ছিল তাঁর সাধনা, তাঁর প্রাণ। তবে সেই সঙ্গীতের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙেছিলেন এই কিংবদন্তী শিল্পী। অনেকে দাবি করেন রেষারেষির কারণে নাকি মিউজিক থেকে দূরে সরে যান রফি, তবে তাঁর ছেলে শহীদ এর আসল কারণ সামনে এনেছেন।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে শাহিদ মহাম্মদ জানান, ভয়ে গান ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। একজন মৌলানা মহম্মদ রফিকে বলেছিলেন যে গান গাওয়া ইসলামে অপরাধ এবং আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করবেন না। এই কারণে গায়ক মিউজিক থেকে অবসর নিয়েছিলেন। তবে কিছুদিন পর তিনি ফিরে আসেন এবং জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত গানের সাধনায় মগ্ন থেকেছেন।
মহম্মদ রফির ছেলে শাহিদ, কিশোর কুমারের সঙ্গে বাবার রেষারেষি নিয়েও জবাব দেন। ভিকি লালওয়ানির ইউটিউব চ্যানেলে তিনি বলেন, 'মানুষ জানে না ওই সময় আসলে কী ঘটেছিল। ১৯৭১ ও ১৯৭২ সালের ওই দুই বছর। আব্বা মাকে নিয়ে হজে গিয়েছিলেন। এটি ছিল তাঁর দ্বিতীয় হজ, যা বড়া হজ বা আকবরি হজ নামেও পরিচিত। বাবা ছিলেন আল্লাহভীরু মানুষ। তখন তার বয়স কম ছিল, তার বয়স আনুমানিক ৪০ বছর হবে। হজ্জের সময় জনৈক মৌলানা তাঁকে বলেছিলেন, ‘রাফি সাহেব, তুমি গানের জগতে আছো এটা বড় পাপ, আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না। শাহিদ বলেন, এই গল্প কেউ জানে না’। এই কথোপকথনের পর তাঁর বাবা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। শাহিদ আরও ব্যাখ্যা করেন, 'মুম্বইয়ে ফিরে তিনি এক কথায় বলেছিলেন, ‘আমি অবসর নিচ্ছি। তিনি কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। শুধু বলতেন, আর গান গাইবেন না। আমি এমন অনেক গল্প শুনেছি যে সংগীত পরিচালকরা তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তিনি বছরের পর বছর ধরে হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারা (মিউজিক ডিরেক্টর) ভেবেছিল তারা কোনো অপরাধ করেছে। সব থেকে দূরে থাকতে মুম্বই ছেড়ে লন্ডনে চলে যান তিনি।’
শহীদ বলেন, কিছুদিন পর তাঁর দাদা (রাফির বড় ছেলে) দুশ্চিন্তা শুরু করলে রফি বলেন, 'আমি রিটার হয়েছি, আল্লাহ পছন্দ করেন না, এটা অপরাধ। জবাবে সে জানায়, আল্লাহ তোমাকে কেবল একটি জিনিসই দিয়েছেন, আর তা হল তোমার কণ্ঠস্বর। ছেলের আশঙ্কা ছিল রফি আর ব্যবসা বা কাজ করতে পারবে না, কিন্তু তাঁর ব্যাখ্যা রফির ওপর কোনো প্রভাব ফেলেনি। মজার ব্যাপার হলো, রফিকে একজন মৌলানা আবার গান গাওয়ার জন্য প্ররোচিত করেছিলেন। শহীদ বলেন, ‘মৌলানা লন্ডনে ছিলেন। তিনি আমার বাবাকে বলেছিলেন যে আল্লাহ প্রদত্ত উপহারটি নষ্ট করা উচিত নয়। মৌলানা তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেন, পরিবারকেও খাওয়াতে হবে। মহম্মদ রফি যখন মুম্বই ফেরার সিদ্ধান্ত নেন, তখন সঙ্গীত পরিচালক নৌশাদও তাঁকে একই কথা বলেছিলেন। তবে এরই মধ্যে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। অনেক প্রজেক্ট রফির হাত থেকে চলে যায়। তবে কাজের জন্য তিনি কখনো হাত পাতেননি।