বিবেক অগ্নিহোত্রীর বহু প্রতীক্ষিত এবং বিতর্কিত ছবি 'দ্য বেঙ্গল ফাইলস' অবশেষে মুক্তি পাচ্ছে আগামিকাল (শুক্রবার)। ৫ সেপ্টেম্বর গোটা দেশে মুক্তি পেলেও বাংলায় চলবে না এই ছবি। অন্তত বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বুক মাই শো-তে এই ছবির একটা স্ক্রিনিংও উল্লেখ করা হয়নি।
অভিযোগ রাজ্যের মাল্টিপ্লেক্স মালিকরা এটি প্রদর্শন করতে। রাজনৈতিক চাপের জেরেই সিঙ্গল স্ক্রিন মালিকরাও এই ছবি প্রদর্শনে না-রাজ। যদিও কলকাতার দুই নামী সিঙ্গল স্ক্রিন নবীনা ও প্রিয়ার মালিক স্পষ্ট জানিয়েছেন, বাগি ৪ দেখানোর কথা আগেই ঠিক ছিল, পাশাপাশি ধুমকেতু দুর্দান্ত ব্যবসা দিচ্ছে, তাই অন্য ছবি নিয়ে ভাবছেন না তাঁরা।
বৃহস্পতিবার দ্য বেঙ্গল ফাইলসের প্রযোজক ও অভিনেত্রী পল্লবী যোশী ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে একটি খোলা চিঠি লিখে তাঁর সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার জন্য হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। ইনস্টাগ্রামে চিঠিটি শেয়ার করে পল্লবী ক্যাপশনে লেখেন, ‘জরুরি আবেদন মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে। দ্য বেঙ্গল ফাইলসের প্রযোজক হিসেবে আমি ব্যথিত যে বাংলার মাল্টিপ্লেক্স চেনগুলি রাজনৈতিক চাপ এবং শাসক দলের হুমকির মুখে ছবিটির মুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে। আমার সাংবিধানিক অধিকার অটুট রাখতে এবং বাংলায় এর মুক্তি সুনিশ্চিত করতে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রককেও ট্যাগ করেন তিনি। চিঠিতে পল্লবী লিখেছেন, 'শ্রদ্ধেয় ম্যাডাম প্রেসিডেন্ট, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমি আপনার কাছে পৌঁছাচ্ছি, অনুগ্রহ নয়, সুরক্ষার জন্য। আমাদের ফাইলস ট্রিলজির শেষ পর্ব 'দ্য বেঙ্গল ফাইলস' মুক্তি পাবে ৫ সেপ্টেম্বর। ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে-র হিন্দু গণহত্যা, নোয়াখালীর ভয়াবহতা ও বঙ্গভঙ্গের ট্রমার দীর্ঘদিনের চাপা সত্য তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সত্যের পথ অবরুদ্ধ। ছবির কাজ শেষ হওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী ছবিটি নিয়ে বিদ্রুপ করেছিলেন। তারপর থেকে ভিত্তিহীন এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, পুলিশ আমাদের ট্রেলার প্রদর্শনী করে দিয়েছে, এমনকি সংবাদপত্রও বিজ্ঞাপন দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। রাজনৈতিক দলের কর্মীরা প্রতিদিন আমার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। এখন প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা আমাদের বলেছেন যে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা তাদের ভয় দেখানো হচ্ছে, হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং সেই কারণে এটি প্রদর্শন করতে অস্বীকার করা হচ্ছে। কোনও আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা নেই, তবুও লোকের কাছে এই ছবি পৌঁছে দেওয়ার রাস্তা বন্ধ করা হচ্ছে'।
তিনি লেখেন, ‘কিংবদন্তি অভিনেতা পদ্মভূষণ ভিক্টর ব্যানার্জি সহ দেশ-বিদেশের অনেক বাঙালি সংগঠন ইতিমধ্যেই আপনার কাছে আবেদন করেছে। তাদের সমর্থন প্রমাণ করে যে সত্যের এখনও মিত্র রয়েছে। দ্য বেঙ্গল ফাইলসে ভারতমাতার কান্না রয়েছে, বেঁচে থাকা ও আশার গল্প বলে এই ছবি। প্রান্তিক অবস্থা থেকে সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে উঠে আসা একজন নারী হিসেবে কেবল আপনিই সত্যিকার অর্থে বুঝতে পারবেন এ ধরনের যন্ত্রণা সহ্য করা এবং এটিকে উদ্দেশ্য হিসেবে পরিণত করার অর্থ কী। এটা সত্যের সিনেমা। কিন্তু সত্যেরও রক্ষা দরকার। ম্যাডাম প্রেসিডেন্ট, আমি কোনও চলচ্চিত্রের জন্য অনুগ্রহ চাই না, বরং শিল্পের জন্য, সত্যের জন্য, ভারতমাতার সন্তান হিসাবে নির্ভয়ে কথা বলার জন্য জায়গা চাই। আপনারাই আমার শেষ ভরসা। দয়া করে আমাদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করুন এবং শান্তিপূর্ণভাবে পশ্চিমবঙ্গে দ্য বেঙ্গল ফাইলস দেখানো হোক।’
এই ছবিতে অভিনয় করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী, অনুপম খের, দর্শন কুমার, সিমরত কৌর, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, নমশি চক্রবর্তী, রাজেশ খেরা, পুনিত ইসার, প্রিয়াংশু চট্টোপাধ্যায়, দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য, সৌরভ দাস এবং মোহন কাপুর।