দুর্গাপুজোর মরশুমে শহর যখন আলোকসজ্জায় ভাসছে, তখন ফের একবার বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার। কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় এই পুজো প্রতি বছর দর্শনার্থীদের ভিড় টানে। তবে এ বার উদ্যোক্তাদের ক্ষোভের মুখে পড়েছে পুলিশ প্রশাসন। বিজেপি কাউন্সিলর তথা উদ্যোক্তাদের অন্যতম মুখ সজল ঘোষের অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবেই পুলিশ বাধা তৈরি করছে, যেন এই পুজো সফল না হয়।
আরও পড়ুন: পুজোর পাস বিক্রিতে শহরে সক্রিয় প্রতারণা চক্র! পুলিশে যাচ্ছে ফোরাম ফর দুর্গোৎসব
সজল ঘোষের দাবি, এই পুজো চালাতে দেওয়া হবে কি হবে না, সেটা নিয়ে পুলিশ বারবার বিভ্রান্তিকর অবস্থান নিচ্ছে। লিখিত নির্দেশ দিতে বলা হয়েছে, কিন্তু কেউ কিছু জানাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উদ্বোধন করার পর থেকেই এই পুজোকে নিশানা করা হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো চালানো সংস্থাকে নোটিস পাঠিয়েছে মুচিপাড়া থানার পুলিশ। চুক্তিপত্র, জিএসটি-সংক্রান্ত কাগজ থেকে শুরু করে সাউন্ড লিমিটের নথি পর্যন্ত হাজির করতে বলা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের প্রশ্ন, দুর্গাপুজোর মতো উৎসব আয়োজন করতেও কি এত জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়তে হবে? শুধু তাই নয়, সজল ঘোষ অভিযোগ করেছেন, তাঁদের এলাকায় নিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। তাঁর বক্তব্য, আগেও এক প্যান্ডেল এভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এ বারও একই ফাঁদ পাতা হচ্ছে। দুর্ঘটনার নাম করে উদ্যোক্তাদের দোষী বানানোর চেষ্টা চলছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যারিকেড নিয়েও। সজল ঘোষের দাবি, ৪০ ফুট রাস্তা গার্ডরেল বসিয়ে ১৫ ফুট করে দেওয়া হয়েছে। ফলে মানুষকে কয়েকশো মিটার পথ যেতে গিয়ে কয়েক কিলোমিটার ঘুরতে হচ্ছে। যদিও কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, পুলিশের কাছে মানুষের নিরাপত্তাই প্রধান। হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। প্রচুর ভিড় হলে রিফেল এফেক্ট তৈরি হয়। সেসব এড়াতেই এই ব্যবস্থা। কারও পুজো বন্ধ করার কোনও উদ্দেশ্য নেই।
অন্যদিকে উদ্যোক্তারা দাবি করছেন, পুলিশ না থাকলেও দর্শনার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিমা দর্শন করছেন। সজল ঘোষ একটি ভিডিয়ো শেয়ার করে বলেন, হাজার হাজার মানুষ রাতভর ঠাকুর দেখলেন, কোনও বিশৃঙ্খলা হয়নি। এতে বোঝা যায়, বাড়তি পুলিশি চাপ ছাড়া পরিস্থিতি সামলানো সম্ভব। রাজনৈতিক মহলে ধারণা, বিতর্কের মূলে রয়েছে সজল ঘোষের রাজনৈতিক পরিচয়। বিরোধীদের বক্তব্য, বিজেপি কাউন্সিলর হওয়ায় তাঁকে লক্ষ্য করেই প্রশাসনের বাড়তি নজরদারি। তবে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, এটা নিছক জনপ্রিয়তা কুড়োনোর রাজনীতি। পুলিশ শুধু নথি চাইছে। নিয়ম না মানলে দুর্ঘটনার দায় কে নেবে?