যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে যে কোনও সামরিক ঘাঁটি পুনঃস্থাপনের প্রচেষ্টার একযোগে বিরোধিতা করল চিন, রাশিয়া, ইরান এবং পাকিস্তান। চিনের বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে। এই বিরোধিতার প্রেক্ষাপট তৈরি হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে ঘিরে। তিনি আফগানিস্তানের বাগরাম বিমান ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের ফাঁকে আফগানিস্তান ইস্যুতে চিন, রাশিয়া, ইরান এবং পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ও প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকের প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে সম্মান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে সে দেশের বর্তমান সংকটের জন্য দায়ী পক্ষগুলির দ্বারা সেখানে বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সামরিক ঘাঁটি পুনঃস্থাপনের বিরোধিতা পুনর্ব্যক্ত করা হয়। বৈঠকে অংশ নেন রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ, ইরানের বিদেশমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাঘচি, চিনের আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ দূত ইউয়ে শিয়াওয়ং এবং পাকিস্তানের সিনিয়র কূটনীতিক উমের সিদ্দিক। বৈঠকের একটি ছবি এক্স-এ শেয়ার করেন চিনা দূত ইউয়ে শিয়াওয়ং।
কী বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প?
সম্প্রতি আফগানিস্তানের বাগরাম বিমান ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প এই বিষয়টি নিয়ে প্রায়শই আলোচনা করে আসছেন। তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ একটি পোস্টে তিনি খোলাখুলি হুমকি দিয়েছেন যে যদি আফগানিস্তান বাগরাম বিমান ঘাঁটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে না দেয়, তাহলে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে। ট্রাম্প বলেছেন, 'আমরা বর্তমানে আফগানিস্তানের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা শীঘ্রই বাগরাম বিমান ঘাঁটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে চাই। যদি আফগানিস্তান তা না করে, তাহলে জানতে পারবেন আমি কী করতে যাচ্ছি।' এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন যে চিনের উপর নজর রাখার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কাবুলের কাছে একটি প্রধান আফগান বিমান ঘাঁটি পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা করছে।
তবে, আফগানিস্তানে সরকার চালানো তালিবান এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তালিবান স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে আফগানিস্তানের মাটি থেকে যে কোনও মার্কিন সামরিক কার্যকলাপ অনুমোদিত হবে না। বাগরাম বিমান ঘাঁটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তরের কোনও প্রশ্নই ওঠে না। তালিবান সরকারের বিদেশ মন্ত্রকের রাজনৈতিক পরিচালক জাকির জালালি এক্স হ্যান্ডেলে পোস্টে লিখেছেন, আফগানিস্তান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় অংশ নেওয়া উচিত। তারা পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে, কিন্তু মার্কিন সামরিক প্রত্যাহার অনুমোদিত হবে না। উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে আল-কায়েদার হামলার পর শুরু হওয়া ২০ বছরের যুদ্ধের সময় বাগরাম বিমান ঘাঁটি ছিল আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাবাহিনীর বৃহত্তম বিমান ঘাঁটি। এই বিমান ঘাঁটিতে একসময় বার্গার কিং এবং পিৎজা হাটের মতো ফাস্ট-ফুড রেস্তরাঁ ছিল, যেখানে মার্কিন সেনাদের খাবার পরিবেশন করা হত। পাশাপাশি ইলেকট্রনিক্স থেকে শুরু করে আফগান কার্পেট পর্যন্ত সবকিছু বিক্রির দোকানও ছিল। এখানে একটি বিশাল জেল কমপ্লেক্সও ছিল।