পহেলগাঁও হামলার উত্তেজনা এখনও অব্যাহত। ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুল্কযুদ্ধও জারি। এরইমাঝে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে ইসলামাবাদের। সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। সঙ্গী ছিলেন পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির। এবার গত বৃহস্পতিবার সেই ওভাল অফিসে হওয়া বৈঠকের একটি ছবি প্রকাশ্যে এসেছে।
নতুন ছবিতে দেখা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বিশ্বের দুর্লভ খনিজ পদার্থ দেখাচ্ছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাপ্রধান। সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খনিজ পদার্থ রাখা খোলা কাঠের বাক্সের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। আর জেনারেল আসিম মুনির বাক্সটির দিকে ইশারা করছেন। সেই সময় তাঁদের মাঝখানে শেহবাজ শরিফ হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন। এই খনিজকে কেন্দ্র করেই নয়া খেলায় নামতে চলেছে ইসলামাবাদ। এদিনের ছবি থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। যে পাথরগুলির নমুনা দেখাচ্ছিলেন মুনির, সেগুলি বস্তেনজাইট ও মনাজাইটের। এই পাথরগুলির মধ্যেই সেরিয়াম, ল্যান্থেনাম, নিওডিমিয়ামের মতো দুর্লভ খনিজ পাওয়া যায়। আর তার দিকেই নজর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং সেক্রেটারি অব স্টেট মার্কো রুবিও। প্রায় দেড় ঘণ্টার এ বৈঠকের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বিশ্বজুড়ে সংঘাত নিরসনে ট্রাম্পের ‘আন্তরিক প্রচেষ্টার’ প্রশংসা করেন। তিনি ট্রাম্পকে ‘শান্তির মানুষ’ হিসেবে আখ্যা দেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, তিনি মার্কিন কোম্পানিগুলিকে পাকিস্তানের কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি, খনি ও খনিজ পদার্থ এবং জ্বালানি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কয়েক বছরের টানাপোড়েনের পর এই বৈঠক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পাকিস্তানের উপর নজর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ইসলামাবাদে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়, যেখানে শরিফ এবং মুনির মার্কিন সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস- এর সঙ্গে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন।চুক্তিগুলি অ্যান্টিমনি, তামা, সোনা, টাংস্টেন এবং বিরল মাটির উপাদান-সহ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানি-সহ পাকিস্তানে প্রক্রিয়াকরণ সুবিধার পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট।শরিফের কার্যালয় জানিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে এই মার্কিন বিনিয়োগে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।যদিও সমঝোতা স্মারকগুলি খনির লাইসেন্স বাধ্যতামূলক নয়, তবে এগুলি পাকিস্তানের খনিজ খাতে বৃহত্তর বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্য নির্ধারণে আগ্রহের ইঙ্গিত দেয়।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের এই চুক্তি হলে তা চিনের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ, এখনও পর্যন্ত রেয়ার আর্থ সাপ্লাইয়ের মার্কেটের দখল রয়েছে বেজিংয়েরই হাতে। পাকিস্তানের ‘বন্ধু’ চিন বহু বছর ধরেই সিপেক প্রকল্পের মাধ্যমে ইসলামাবাদে বিনিয়োগ করছে। এনার্জি থেকে শুরু করে পরিকাঠামো, সব ক্ষেত্রেই চিনের ভরসাতেই চলছে পাকিস্তান। আর সেই বালুচিস্তানের ভূগর্ভস্থ সম্পদেই এবার যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশাধিকার পায়, তাহলে তা চিনের জন্য সরাসরি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।