আমেরিকায় তিন দশকের বেশি সময় কাটানোর পর সম্প্রতি সেখান থেকে বিতাড়িত হওয়া ৭৩ বছরের শিখ মহিলা হরজিৎ কৌর শনিবার বলেছেন, তিনি যে কষ্টের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, সেই কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেন আর কাউকে যেতে না হয়। তিনি আমেরিকাতে তাঁর পরিবারের সঙ্গে আবার মিলিত হওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন। হরজিৎ আমেরিকাতে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছিলেন, কিন্তু তা গৃহীত হয়নি। তাঁর আইনজীবী আগে জানিয়েছিলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার অভিবাসন আধিকারিকদের হাতে আটক হওয়ার পর হরজিৎকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁকে গোমাংস খেতে দেওয়া হয়েছিল, যা তিনি খেতে পারেননি। ক্যালিফোর্নিয়ার অভিবাসন আধিকারিকরা ৮ সেপ্টেম্বর তাঁকে আটক করেন, যখন তিনি নিয়মিত পরীক্ষার জন্য গিয়েছিলেন। এরপর তাঁর পরিবারের লোকজন ও সমাজের সদস্যরা বিক্ষোভ করেন এবং তাঁর পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ১৯৯২ সালে দুই ছেলেকে নিয়ে একা মা হিসেবে হরজিৎ আমেরিকায় গিয়েছিলেন। ২০১২ সালে তাঁর আশ্রয়ের আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে তিনি ১৩ বছরের বেশি সময় ধরে প্রতি ছ’মাস অন্তর সান ফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত অভিবাসন রিপোর্ট করতেন, তাঁর পুত্রবধূ মঞ্জি তাঁর নির্বাসনের পর একথা জানিয়েছেন।
মোহালিতে বোনের বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় হরজিৎ বলেন, 'আমি প্রতি ছয় মাস অন্তর সেখানে (আইসিই অফিসে) যেতাম আমার উপস্থিতি নথিভুক্ত করতে। আট সেপ্টেম্বর আমি সেখানে আমার উপস্থিতি নথিভুক্ত করতে গিয়েছিলাম, কিন্তু তারা আমাকে না জানিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করে। হরজিৎ আরও জানিয়েছেন যে তার ঘনিষ্ঠ পরিবারের সদস্যদের বিদায় জানানোর সুযোগ না দিয়েই তাকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
তিনি বলেন, 'আমার পরিবার আমাকে ভারতে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চেয়েছিল এবং আমাকে বিমানের টিকিটও দেখায়। কিন্তু তারা রাজি হননি। তিনি বলেন, 'আমার ওয়ার্ক পারমিট, আইডি ও লাইসেন্স ছিল। আমার সবকিছু ছিল। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তাঁর সঙ্গে কেমন আচরণ করেছেন জানতে চাইলে তিনি অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, ‘আমি কী বলব? আমাকে যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল তার মধ্যে দিয়ে কাউকে যেন যেতে না হয়।’
সান ফ্রান্সিসকোতে আটক হওয়ার পরে তাঁকে একটি ঘরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার বিবরণ দিয়ে হরজিৎ বলেন, ‘আমাকে গরুর মাংস দেওয়া হয়েছিল, যা আমি খেতে পারিনি।’ দুই হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করা হরজিৎ বলেন, ‘ওরা আমার ছবি তুলে সারারাত রুমে রেখেছিল। খুব ঠান্ডা ছিল এবং আমি শুয়ে থাকতে পারছিলাম না।’ যখন তারা আমাকে সান ফ্রান্সিসকো থেকে বেকারসফিল্ডে নিয়ে যায়, তখন আমাকে হাতকড়া এবং শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। তাঁকে ওষুধ খাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে হরজিৎ মাথা নেড়ে বলেন, 'আমার সমস্ত অনুরোধ অগ্রাহ্য করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'নিরামিষাশী হওয়ায় আমাকে দেওয়া খাবারও খেতে পারতাম না। গরুর মাংস দিয়েছিল, যা আমি খাই না।
হরজিৎ জানিয়েছেন, তাঁকে বিমানে থাকা ১৩২ জন সঙ্গে নির্বাসিত করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ১৫ জন কলম্বিয়ান নাগরিক ছিলেন। বিমানে তাঁকে হাতকড়া পরানো হয়েছিল কিনা, জানতে চাইলে হরজিৎ বলেন, 'না। বিমানে দু'জন ভালো অফিসার ছিলেন, যারা আমাকে হাতকড়া পরাননি, যদিও অন্য নির্বাসিতদের হাতকড়া এবং শিকল দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘আমার সন্তান, নাতি-নাতনি-সহ পুরো পরিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছে। যখন আমি তার কণ্ঠস্বর শুনি, আমি কিছু বলতে পারি না। আমি তাদের যত্ন নিয়েছি। আমেরিকায় ফিরতে চান কিনা জানতে চাইলে হরজিৎ বলেন, ‘অবশ্যই। আমার পুরো পরিবার ওখানে আছে। সাম্প্রতিক মাসগুলিতে বিপুল সংখ্যক ভারতীয়কে ফেরত পাঠানোর জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দায়ী করেন তিনি। ’আমি 1992 সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছি, তবে কর্তৃপক্ষের দ্বারা এমন কোনও পদক্ষেপ আমি কখনও দেখিনি। কাউকে ফিরে যেতে বলা হয়নি।' তাঁকে আটকের পর ক্যালিফোর্নিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয় এবং বিক্ষোভকারীরা হরজিতের মুক্তির দাবিতে প্ল্যাকার্ড বহন করে যাতে লেখা ছিল ‘আমাদের দাদিকে স্পর্শ করবেন না’ এবং ‘দাদিকে বাড়িতে নিয়ে আসুন’।