দীর্ঘ ৬২ বছর পর ভারতীয় বিমান বাহিনী থেকে বিদায় নিচ্ছে বহু যুদ্ধের ‘নায়ক’ মিগ-২১। সেনা সূত্রে খবর, আগামী সেপ্টেম্বরেই কর্মকাল শেষ হবে পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন জমানার বিমান নির্মাতা সংস্থা মিকোয়ান-গুরেভিচ অ্যারোস্পেস কর্পোরেশনের মিগের। অন্যদিকে, অনেক অপেক্ষার পর এবার ভারতের হাতে এসেছে অত্যাধুনিক অ্যাপাচে চপার।১৫ মাস অপেক্ষার পর প্রথম দফায় তিনটি কপ্টার পেল সেনা। চলতি বছরের শেষের দিকে মিলবে আরও ৩টি কপ্টার।
সূত্রের খবর, শেষবারের মতো মিগ-২১ যুদ্ধবিমানকে ভারতীয় বায়ুসেনা ১৯ সেপ্টেম্বর চণ্ডীগড় বিমানঘাঁটিতে ২৩ স্কোয়াড্রন (প্যান্থার্স) আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানাবে।তার জায়গা নেবে নতুন এবং তরতাজা তেজস এমকে১এ যুদ্ধবিমান। ১৯৬৩ সালে বিমান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া মিগ-২১ মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বালাকোট, ভারতের সকল বড় বড় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। এরমধ্যে রয়েছে ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, কার্গিল যুদ্ধ, ২০১৯ সালের বালাকোট হামলা এবং সাম্প্রতিক সময়ের অপারেশন সিঁদুরও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে চিরকাল ভালো নয় মন্দের বিতর্ক থেকে যাবে মিগ-২১ যুদ্ধবিমান নিয়ে।এই বিমান নিয়েই ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে গ্রুপ ক্যাপ্টেন (তখন উইং কমান্ডার) অভিনন্দন বর্তমান ভারতের আকাশে ঢুকে পড়া পাক বিমান এফ-১৬’তে তাড়া করে ভূপাতিক করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত পাক বাহিনী তাঁকে আটক করে। ভারতের কূটনৈতিক চাপের মুখে পাকিস্তান দুদিনের মধ্যে অভিনন্দনকে ওয়াঘা সীমান্তে নিরাপদে মুক্তি দেয়। ওই সাহসী অভিযানের জন্য সেনা বাহিনীর বীর চক্র সম্মান পেয়েছেন অভিনন্দন।
আরও পড়ুন-উপরাষ্ট্রপতি ধনখড়ের ইস্তফা মঞ্জুর! দেশজুড়ে চর্চার মধ্যে কী বললেন প্রধানমন্ত্রী?
মিগ-২১ যুদ্ধবিমান ১৯৬৩ সালে বিমান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং ১৯৯৮-এ এই বিমান দিয়েই ভারত পাকিস্তানের মোকাবিলা করে বিজয় অর্জন করেছে। সব মিলিয়ে পর্যায়ক্রমে ৯০০টি মিগ-২১ বিমান ভারতীয় বিমান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এর আগে বিমান বাহিনীর আধিকারিকরা জানিয়েছেন, অনেকগুলি মিগ-২১ বিমান বিধ্বস্ত হয় নানা ঘটনায়। এমন পরিস্থিতিতে সেগুলি এখন কতটা নির্ভরযোগ্য তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন দেখা দেয়। গত ৬০ বছরে ৪০০টির বেশি বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। মারা গিয়েছেন প্রায় ২০০ পাইলট।
এদিকে, দীর্ঘ ১৫ মাসের অপেক্ষার পর অবশেষে ভারতীয় সেনার হাতে এল ‘উড়ন্ত ট্যাঙ্ক’ নামে পরিচিত অ্যাপাচে কপ্টার। মঙ্গলবার তিনটি অ্যাপাচে কপ্টার নিয়ে উত্তরপ্রদেশের হিন্ডন বায়ুসেনা ঘাঁটিতে অবতরণ করে মার্কিন পরিবহণ বিমান। এই নিয়ে ভারতীয় সেনায় অন্তর্ভুক্ত হল ২৫টি অ্যাপাচে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বাকি ৩টি কপ্টার চলতি বছরের শেষের দিকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এই হেলিকপ্টার পাঠিয়ে দেওয়া হবে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে। ভারতীয় সেনার এভিয়েশন কর্পসের যোধপুর ইউনিটের মাধ্যমেই কাজ করবে এই অ্যাপাচে হেলিকপ্টারগুলি।সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতীয় সেনাবাহিনী অ্যাপাচে কপ্টারের ছবি শেয়ার করে লিখেছে, 'আর্মি এভিয়েশনের জন্য অ্যাপাচে হেলিকপ্টারের প্রথম ব্যাচ ভারতে পৌঁছানোর পর ভারতীয় সেনাবাহিনী একটি মাইলফলক অর্জন করেছে।'
আরও পড়ুন-উপরাষ্ট্রপতি ধনখড়ের ইস্তফা মঞ্জুর! দেশজুড়ে চর্চার মধ্যে কী বললেন প্রধানমন্ত্রী?
২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি সই করেছিল ভারতীয় সেনা। মোট ছ’টি অ্যাপাচে হেলিকপ্টার কেনা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তখন ঠিক ছিল, ২০২৪-এর মে-জুন মাসের মধ্যেই হেলিকপ্টার ডেলিভারি হয়ে যাবে। কিন্তু পরপর বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সমস্যা, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ শৃঙ্খলে ঘাটতির জন্য সেই ডেলিভারির সময়সীমা পিছিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২০২৪-এর ডিসেম্বরে।প্রথমে ঠিক ছিল, দুই দফায় তিনটি করে মোট ছ’টি হেলিকপ্টার পাঠাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেই অনুযায়ী, দ্বিতীয় ব্যাচের হেলিকপ্টার আসার কথা পরে। কিন্তু প্রথম ব্যাচ তখনও পর্যন্ত ভারতে এসে পৌঁছয়নি। ফলে যুদ্ধপ্রস্তুতিতে বড়সড় ফাঁক থেকে যাচ্ছিল। এ বছরের মার্চ মাসে জোধপুরের নাগতালাওয়ে অ্যাপাচে স্কোয়াড্রন গঠন করে সেনা। পাইলট ও গ্রাউন্ড স্টাফদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হেলিকপ্টার হাতে না থাকায় এতদিন সেই স্কোয়াড্রন ছিল শুধুই কাগজে-কলমে। এখন অ্যাপাচে আসায় সজ্জা সম্পূর্ণ হবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহল মহল।