টানা বর্ষণ ও দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের (ডিভিসি) জলছাড়াকে কেন্দ্র করে রাজ্যে ফের রাজনৈতিক সংঘাতের আবহ। রাজ্য সরকারের অভিযোগ ডিভিসির অতিরিক্ত জলছাড়াই বন্যার মূল কারণ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খোদ ঘাটাল ও আরামবাগ পরিদর্শন করে জলছাড়ার জন্য ডিভিসিকে দায়ী করেন। এবার সেই অভিযোগ সরাসরি প্রতিধ্বনিত হল সংসদের উচ্চকক্ষে।
আরও পড়ুন: শিবভক্তদের জন্য দামোদরে সতর্কতা, তৈরি নতুন স্নানঘাট, বন্ধ বড়জোড়ার অস্থায়ী ঘাট
রাজ্যসভায় জলশক্তি মন্ত্রকের উত্তরে ক্ষুব্ধ তৃণমূল সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করলেন, এটা প্রকৃতপক্ষে প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়, সম্পূর্ণভাবে পরিকল্পিত ‘ম্যান-মেড বন্যা’। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তথ্য চেপে গিয়ে ডিভিসির মাধ্যমে জল ছেড়ে বাংলাকে ডুবিয়েছে। ঋতব্রতের দাবি, গত ১৮ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ২৮ দিনে ডিভিসি যে ২৭,৯৮৭ লক্ষ কিউবিক মিটার জল ছেড়েছে তা স্বীকার করেছে কেন্দ্র। অথচ প্রকৃত হিসাব অনুযায়ী, গোটা জুন-জুলাই মাসে মোট জলছাড়ার পরিমাণ ৫০,২৮৭ লক্ষ কিউবিক মিটার। তুলনামূলকভাবে ২০২৩ সালের চেয়ে ৩০ গুণ এবং ২০২৪ সালের চেয়ে ১১ গুণ বেশি জল ছাড়া হয়েছে বলে জানান তিনি।তাঁর আরও প্রশ্ন ছিল, এই বিপুল পরিমাণ জলছাড়ার আগে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কি কোনও আলোচনা হয়েছিল? যদি হয়ে থাকে, তার বিস্তারিত তথ্য কোথায়? আর যদি আলোচনা না হয়ে থাকে, তবে কেন হয়নি?
কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী সি আর পাতিল রাজ্যসভায় লিখিত জবাবে জানিয়েছেন, ডিভিসির জলছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় একটি কমিটি। সেখানে সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন, ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিরাও থাকেন। সেই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়া হয়। মন্ত্রীর দাবি, পানীয় জল, সেচ, নৌ যোগাযোগ এবং শিল্পক্ষেত্রে সুবিধা বজায় রেখেই কাজ করে ডিভিসি। কিন্তু সেই উত্তর মানতে নারাজ তৃণমূল। ঋতব্রতের অভিযোগ, কমিটি যে রয়েছে, সেটা তো সকলেই জানে। কিন্তু কমিটি থাকলেই কি নিয়মমাফিক আলোচনা হয়েছে ধরা যায়? জলশক্তি মন্ত্রক প্রশ্নের একটিও সরাসরি উত্তর দেয়নি। শুধু এড়িয়ে যাওয়ার মতো কিছু তথ্য দিয়েছে। তাঁর আরও অভিযোগ, দক্ষিণবঙ্গে হাজার হাজার একর ফসল নষ্ট হয়েছে। লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া। আর এই বিপর্যয়ের দায় এড়াতে এখন পরিসংখ্যানের খেলায় মেতে উঠেছে কেন্দ্র। এই মন্তব্যকে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা ফের চড়ছে। তৃণমূলের স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, ২০২৬-এর ভোটে ভেসে যাবে বিজেপির ‘রাজনৈতিক স্বপ্ন’।