ব্যবসার ইঁদুর দৌড়ে পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তৈরি করেছেন নিজেদের ব্র্যান্ড, নারী দিবসে কী বলছেন মহিলা ব্যবসায়ীরা?

বাড়ি থেকে অফিস, খেলার ময়দান থেকে ব্যবসা- বর্তমান সময়ে মহিলারা পিছিয়ে নেই কোনও কিছুতেই। কিন্তু যেখানে দাঁড়িয়ে আজও কোথাও গিয়ে শুনতে হয় ‘বাঙালিদের দ্বারা ব্যবসা হয় না’, সেখানে নারী দিবসে কলকাতার ৫ স্বনামধন্য মহিলা ব্যবসায়ী শোনালেন তাঁদের লড়াইয়ের কথা।এমন অনেকে রয়েছেন যাঁরা হয়তো ফার্স্ট জেনারেশন ব্যবসায়ী। অর্থাৎ নিজে একটি ব্যবসা শুরু করেছেন। তাঁদের একরকম প্রতিকূলতা, সুবিধা, অসুবিধার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। অন্যদিকে আবার যাঁরা পৈতৃক ব্যবসা সামলাচ্ছেন, এগিয়ে নিয়ে চলেছেন তাঁদের পথ অন্য রকম। ফার্স্ট জেনারেশন ব্যবসায়ী হিসেবে মহুয়া দত্ত জানিয়েছেন, 'শূন্য থেকে শুরু করলে যেটা হয়, শেখানোর কোনও লোক থাকে না, কোনও ব্যাকআপ থাকে না, বা থাকে না কোনও রেফারেন্স পয়েন্ট। আমি যে কোনও সিদ্ধান্ত নেব, সেটা করলে কী হতে পারে সেটার কোনও উদাহরণ আমার সামনে থাকে না। তো চ্যালেঞ্জটা মূলত এখান থেকে শুরু হয়।'আরও পড়ুন: ‘বাঙালির দ্বারা ব্যবসা হয় না’ ভাবনাকে নস্যাৎ অদিতির, বললেন, ‘আমরা নিজের ঢাক নিজে পেটাতে পছন্দ করি না, ভদ্রতা করি…'আরও পড়ুন: 'স্বাধীনতা-থ্রিল'-এর খোঁজে ৯-৫ টার চাকরি জীবনকে বিদায়! মহিলা উদ্যোগপতি হিসেবে কীভাবে সমাজকে বদলাচ্ছেন মহুয়া?অন্যদিকে নিজের ব্যবসা তৈরি করা এবং সেই সংক্রান্ত লড়াইয়ের বিষয়ে দীপান্বিতা গুপ্তর মত, 'এটা লড়াই তো বটেই। কিন্তু যখন ফেলে আসা সফর, সময়ের দিকে তাকাই তখন একটা ভালো লাগা কাজ করে। আমি আসলে শাহরুখ-প্রেমী। তাই ওঁর সিনেমার সেই সংলাপ 'যখন কিছু মন থেকে চাইবে তখন সেটা গোটা পৃথিবী তোমাকে পাইয়ে দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করতে থাকে' সেই কথাটাকে সত্যি বলে মনে হয়। মনে হয় যেন আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।'পৈতৃক ব্যবসা সামলাতে গিয়ে অদিতি নন্দী জানিয়েছেন, 'কখনও কখনও মনে হয়েছে, এর থেকে যদি একটা ক্লিন স্লেট পেতাম, তবে ছবিটা কীভাবে আঁকতাম। বা আমি নিজে এটা এভাবে করতে চাই। কিন্তু যে সংস্থা অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে, সেখানে তার যে কাঠামো রয়েছে সেটা ধরে রাখাটাই বড় বিষয়।'মহিলা ব্যবসায়ী হিসেবে সকলেই কম বেশি প্রতিকূলতা পেরিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের সকলের মত এক। পুরুষ হলে প্রতিকূলতা অন্যরকম হতো। অতএব সমস্যা সামলে লক্ষ্যে অবিচল থাকাই তাঁদের মূল মন্ত্র।কিন্তু অনেকেই যে বলেন বাঙালিদের দ্বারা ব্যবসা হয় না? পৈতৃক ব্যবসা সামলানোর পাশাপাশি নিজের ব্যবসা শুরু করা দোলা মল্লিক জানিয়েছেন, 'এই কথাটা পুরোপুরি একটা ভুল ধারণা। কোনও জাতিবিশেষ ভাবে যদি বলা হয় যে এঁদের দ্বারা এটা হবে না, ওঁদের দ্বারা ওটা হবে না তাহলে সেটা সম্পূর্ণ ভুল একটা কথা। এটা সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করে ব্যক্তিবিশেষের উপর যে সে কী করতে চায়, চাকরি, ব্যবসা না অন্য কিছু।' অদিতিরও প্রায় এক মত। তাঁর কথায়, 'আমরা বাঙালিরা নিজের ঢাক নিজে পেটাতে পছন্দ করি না, ভদ্রতা করি, এবং ব্র্যান্ডিং করতে এক পা পিছিয়ে যাই। ধার করতে অপছন্দ করি। পাবলিক ফান্ড নিতে দ্বিধাবোধ করি। তাই আমাদের ব্যবসা সম্পর্কে বেশি মানুষ জানতে পারেন না।'আরও পড়ুন: চাকরি জীবন ছেড়ে 'নিজের কিছু' করার ভাবনা দিয়ে শুরু, আজ অন্যের ব্যবসাকে 'মাত্রা' দিচ্ছেন দীপান্বিতা!বর্তমানে বহু মহিলা নিজের ব্যবসা শুরু করছেন। বা আগামীতে যাঁরা ব্যবসাকে পেশা হিসেবে বেছে নেবেন তাঁদের জন্য কী বলবেন কলকাতার সুপ্রতিষ্ঠিত মহিলা ব্যবসায়ীরা? দেবযানী রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, 'ভিতর থেকে চাইতে হবে। অন্যেরা করছে বলে আমায় করতে হবে এমনটা করলে হবে না। 'কিছু অর্জন করতে হবে', ভিতরে এই খিদে না থাকলে, বা এটা ছাড়া আমার আর কিছু করার নেই, অন্য অপশন নেই এই ভাবনা না থাকলে ব্যবসা করা যাবে না।' অন্যদিকে দীপান্বিতার মতে, 'টাইম ম্যানেজমেন্ট শিখতে হবে। দ্বিতীয়ত, সব কিছুর মধ্যে নিজেকে উপেক্ষা করলে চলবে না। ব্যবসা ৯-৫ টার চাকরি নয়, এটা ২৪*৭ চলে। তার মধ্যেও নিজেকে ভালো রাখতে হবে, স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে।'