দুর্গা পুজো বাঙালির প্রাণের উৎসব। তাই এই উৎসব নিয়েও প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত রয়েছে নানা প্রবাদ। তেমনই এক প্রবাদ হল মা মর্ত্যে এসে পোশাক পরে সাজেন দাঁ বাড়িতে। আহার করেন কুমোরটুলির মিত্র বাড়িতে। রাত্রি জেগে নাচ দেখেন শোভাবাজার রাজবাড়িতে। কলকাতার বনেদিবাড়ির দুর্গাপুজো বলতেই যে নামগুলি প্রথমেই উঠে আসে, তার মধ্যে অন্যতম হল এই তিনটি।
শিবকৃষ্ণ দাঁয়ের পুজো
সেই সময় মাকে এই তিন বাড়িতেই সাড়ম্বরে পুজো করা হত। এর মধ্যে দাঁ বাড়ি অর্থাৎ শিবকৃষ্ণ দাঁয়ের পুজোয় মা নজর কাড়তেন তাঁর রাজকীয় সাজে। কুমোরটুলির অভয়চরণ মিত্রের বাড়িতে মায়ের জন্য আয়োজন করা হত এক মণ চালের এলাহী ভোগ। অন্যদিকে শোভাবাজার রাজবাড়িতে সারা রাত নাচের আসর বসত পুজোর কয়েকদিন। সেই সূত্র ধরেই এই প্রবাদের জন্ম বাংলার বুকে।
আরও পড়ুন - মহালয়ার আগেই লাকি ৪ রাশি, মিটবে ঘরোয়া বিবাদ, হাতে আসবে পাওনা টাকা! অফিসেও সুখবর
জোড়াসাঁকোর শিবকৃষ্ণ দাঁ পরিবারে মা দুর্গা প্রথম পূজিত হন ১৮৪০ সালে। গোকুলচন্দ্র দাঁয়ের উদ্যোগেই প্রথম পুজো। গোকুলচন্দ্র ছিলেন বর্ধমানের সাতগাছিয়ার আদি বাসিন্দা। সেখানে আজও রয়েছে মায়ের মন্দির ও মূর্তি । এই গোকুলচন্দ্রের দত্তক পুত্র হলেন শিবকৃষ্ণ দাঁ। তাঁর আমলেই দাঁ পরিবারের সুখসমৃদ্ধি ফুলেফেঁপে ওঠে। লোহা, কয়লা আর হার্ডওয়ারের ব্যবসায় প্রভূত লাভের প্রভাব পড়েছিল দুর্গাপুজোতেও। তখন থেকেই এই বাড়ির পুজো কিংবদন্তী।
অভয়চরণ মিত্র বাড়িতে পুজো
কুমোরটুলির অভয়চরণ মিত্র বাড়িতে পুজো শুরু হয় প্রায় ২০০ বছর আগে । রাধাকৃষ্ণ মিত্রর হাত ধরে শুরু এই পুজোর। রথের দিন কাঠামো পুজো থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রতিমা নির্মাণ। ডাকের সাজে সাজেন মা। মাখনের নৈবেদ্য হল মিত্র বাড়ির ভোগের প্রধান আকর্ষণ। মিত্র বাড়িতে ৩০ থেকে ৫০ মণ চালের নৈবেদ্য থাকে প্রতি বছর, যা এই বাড়়িকে উন্নীত করেছিল প্রবাদে।
আরও পড়ুন - বাথরুমের দরজা খোলা রাখেন? বাস্তুমতে হতে পারে এইসব অমঙ্গল, জেনে নিন প্রতিকার
শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো
অন্যদিকে শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো শুরুর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পলাশীর যুদ্ধের ইতিহাস। সেই সময় ব্রিটিশরা বিজয় উদযাপনের জন্য আয়োজন করতে বলেছিলেন রাজা নবকৃষ্ণ দেবকে। শোভাবাজার রাজবাড়িতেই তাঁর আয়োজন হয়। তখন থেকেই শুরু দুর্গা পুজো। প্রসঙ্গত, শোভাবাজার রাজবাড়িতেই প্রথম বাঈজি নাচ শুরু হয় দুর্গা পুজোয়। তাই প্রবাদে বলা হয়, দেবী শোভাবাজার রাজবাড়িতে রাত জেগে নাচ দেখেন।