বাড়ি থেকে অফিস, খেলার ময়দান থেকে ব্যবসা- বর্তমান সময়ে মহিলারা পিছিয়ে নেই কোনও কিছুতেই। কিন্তু যেখানে দাঁড়িয়ে আজও কোথাও গিয়ে শুনতে হয় ‘বাঙালিদের দ্বারা ব্যবসা হয় না’, সেখানে নারী দিবসের ঠিক প্রাক্কালে ১৫০ বছরের প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য এগিয়ে নিয়ে চলেছেন অদিতি নন্দী। দায়িত্ব, কাজের চাপ থেকে প্রতিকূলতার মোকাবিলা, সহ নানা বিষয়ে হিন্দুস্থান টাইমস বাংলাকে কী কী জানালেন তিনি?
১৫০ বছরের একটা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেওয়ার পর মহিলা হিসেবে ব্যবসা সামলাতে গিয়ে কখনও কোনও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন?
অদিতি নন্দী: বছর ৩০ আগে যখন কাজ শুরু করেছিলাম, তখন আমার কাজের জায়গায় মহিলার সংখ্যা নগণ্য। নেই বললেই চলে। সেখানে, মানে কলকাতা শেয়ার বাজারের বাড়িটিতে লেডিজ ওয়াশরুমের মতো সাধারণ সুবিধাটুকুও ছিল না। লিফটের গিজগিজে ভিড়ে নিজেকে বাঁচিয়ে দাঁড়াতে হতো। সেই জায়গা থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছি আমরা। চ্যালেঞ্জ হিসেবে ভাবার চেষ্টা করিনি কখনও। কাজটা ভালো ভাবে জেনে এবং বুঝে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার কথাই ভেবেছি তখন। ১৫০ বছরের পুরনো সংস্থা আমাদের। সেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দায়িত্ব এবং বিশ্বাসের ভিত তৈরি হয়েছে। একদিনে এই দায়িত্ব আসেনি। ধীরে ধীরে দায়িত্ব বেড়েছে। প্রত্যেক সময়েই কিছু না কিছু চ্যালেঞ্জেস ছিল, হার্ডল রেসের মত। এভাবেই ব্যবসা হয়। কিছু পেতে গেলে কিছু ছাড়তে হয়। ক্লায়েন্টদের স্বার্থ বরাবর সবার প্রথমে রাখার চেষ্টা করেছি। সেটার জন্য প্রয়োজনে অন্য কিছু ছাড়তে হলে ছেড়েছি।
আরও পড়ুন: চাকরি জীবন ছেড়ে 'নিজের কিছু' করার ভাবনা দিয়ে শুরু, আজ অন্যের ব্যবসাকে 'মাত্রা' দিচ্ছেন দীপান্বিতা!
স্ক্র্যাচ থেকে নিজের কিছু তৈরি করা এক রকমের চ্যালেঞ্জ। আর যেটা বহু বছর ধরে চলে আসছে সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কি তার থেকে কঠিন বলে মনে করেন?
অদিতি নন্দী: কখনও কখনও মনে হয়েছে, এর থেকে যদি একটা ক্লিন স্লেট পেতাম, তবে ছবিটা কীভাবে আঁকতাম। বা আমি নিজে এটা এভাবে করতে চাই। কিন্তু যে সংস্থা অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে, সেখানে তার যে কাঠামো রয়েছে সেটা ধরে রাখাটাই বড় বিষয়। ৩০ বছর আগে যখন প্রথম কম্পিউটার এসেছিল, যখন সেবি তৈরি হল, যখন নতুন নতুন নিয়ম আসে, প্রত্যেকবারেই আমাদের নতুনভাবে এই কাঠামোর উপরেই প্রতিমা তৈরি করতে হয়। এখনও পর্যন্ত সেটাই আমাদের মুখ্য কাজ। কঠিন হতে পারে, কিন্তু করতে করতে অভ্যাস হয়ে গেছে।
'বাঙালিদের দ্বারা ব্যবসা হয় না' এমন একটা প্রচলিত ধারণা আছে। নিজে একজন ব্যবসায়ী হয়ে এই তকমা নিয়ে কী বলতে চান?
অদিতি নন্দী: অনেক বাঙালিকেই ব্যবসা করতে দেখেছি। আমাদের পারিবারিক ব্যবসা। আশেপাশে অনেক বাঙালি ব্যবসায়ী সংস্থাকেই সাফল্যের সঙ্গে কাজ করতে দেখেছি। তাই অবাঙালিরা ব্যবসা জানেন, বাঙালিরা জানেন না, এমন ধারণাকে পাত্তা দিতে রাজি নই। আমরা বোধহয় শুধু বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে ভাবছি। একসময় ইসকো বাঙালির ছিল, গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল ছিল, আরও অনেক নাম রয়েছে এই তালিকায় যা চেম্বার অফ কমার্সের রেকর্ডে দেখতে পাবেন। আমরা বাঙালিরা নিজের ঢাক নিজে পেটাতে পছন্দ করি না, ভদ্রতা করি, এবং ব্র্যান্ডিং করতে এক পা পিছিয়ে যাই। ধার করতে অপছন্দ করি। পাবলিক ফান্ড নিতে দ্বিধাবোধ করি। তাই আমাদের ব্যবসা সম্পর্কে বেশি মানুষ জানতে পারেন না।
যে মহিলারা আগামীতে ব্যবসা শুরু করতে চান তাঁদের কী বার্তা দেবেন? ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য কোন জিনিসগুলো মাথায় রাখা আবশ্যক?
অদিতি নন্দী: মহিলাদের সবচেয়ে সুবিধা হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই আমরা এক পা পিছিয়ে থাকার সুবিধাটা পাই। সংসারের দায়িত্ব সামলাই, কিন্তু আর্থিক দায়িত্বে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দ্বিতীয় ভাগে। রিস্ক নেওয়ার জায়গাটা আমাদের আছে। তাই উৎসাহ নিয়ে ব্যবসা শুরু করুন। হলে হবে, না হলে ভেবেচিন্তে আবার অন্য একটা ব্যবসায় হাত দেবেন। এই ফ্লেক্সিবিলিটি রাখতে হবে, তবেই ব্যবসায় টিকে থাকা যাবে। যদি দেখেন হল না, বা আপনি এটা করতে অস্বস্তিবোধ করছেন, তখন বদলানোর সুযোগ থাকছে আপনার নিজের হাতেই। তবে কাজের নিয়মানুবর্তিতা এবং আর্থিক নিয়ম মেনে চলা– এগুলোও থাকতে হবে। ব্যবসা কতটা বাড়াবেন, কখন বাড়াবেন– সেটা নির্ভর করবে আপনার নিজের রিস্ক প্রোফাইল এবং স্বভাবের ওপর। যদি ধীরে চলতে চান, নিঃসন্দেহে তাই চলুন। প্রথম থেকে প্রজেক্ট প্ল্যানটা সেভাবেই এঁকে নিন। নিজের মতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবেন। কারণ আপনার মূল কাজ আপনাকেই করতে হবে।