মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার আমেরিকার বাইরে নির্মিত সিনেমার ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথায় অন্যান্য দেশ আমেরিকা থেকে এসব ব্যবসা চুরি করছে। ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে ট্রাম্প বলেছিলেন যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে নির্মিত যে কোনও ছবির উপর ১০০% শুল্ক আরোপ করছেন। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশ আমেরিকা থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের ব্যবসা চুরি করছে, যেমন 'শিশুর কাছ থেকে ক্যান্ডি চুরি করা'। তিনি বলেন, 'আমাদের চলচ্চিত্র নির্মাণের ব্যবসা যুক্তরাষ্ট্র থেকে চুরি হয়ে গেছে, ঠিক যেমন 'শিশুর কাছ থেকে ক্যান্ডি চুরি'। ক্যালিফোর্নিয়া, তার দুর্বল এবং অযোগ্য গভর্নরের কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে! অতএব, এই দীর্ঘ সময়, কখনও শেষ না হওয়া সমস্যাটি সমাধান করার জন্য, আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে নির্মিত যে কোনও চলচ্চিত্রের উপর ১০০% শুল্ক আরোপ করব। এই বিষয়ে আপনার মনোযোগের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমেরিকাকে আবার মহান করে তুলুন!'
ট্রাম্পের এই ঘোষণার জেরে হইচই কাণ্ড গোটা বিশ্বের সিনেমা জগতে। ভারতীয় ছবির বড় বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষত দক্ষিণী ছবির বিরাট দর্শক রয়েছে আন্তলান্তিক পারে। পরিসংখ্যান বলছে ভারতীয় ছবির আয়ের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ আসে আমেরিকা থেকে। তাই ট্রাম্পের এই শুল্ক চাপানোর ঘোষণায় বড় ধাক্কা খাবে চলচ্চিত্র ব্যবসা।
রাশিয়া থেকে তেল কেনা নাকি ভারতের ‘অপরাধ’। তাই মার্কিন মুলুকে ভারতীয় পণ্যের উপর আগেই ৫০% শুল্ক চাপিয়েছেন ট্রাম্প। এবার তাঁর নজরে বিদেশি ভাষার ছবি। এই কর চালু হলে ছবির ডিস্ট্রিবিউশনের খরচ বাড়বে, একইসঙ্গে টিকিটের দামও বাড়বে।
প্রোডিউসারস গিল্ড অফ ইন্ডিয়ার মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত তেলুগু, হিন্দি, তামিল, মালয়ালম, পাঞ্জাবি, বাংলা এবং অন্যান্য ভারতীয় ভাষার সিনেমা দেখার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী ভারতীয়রা বছরে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। ভারতীয়রা মোট মার্কিন জনসংখ্যার প্রায় ১.৬%, অন্য়দিকে প্রবাসী বাংলাদেশি-পাকিস্তানিরাও ভারতীয় ছবি উপভোগ করে মার্কিন মুলুকে।
ভারতীয় চলচ্চিত্রের বক্স অফিস আয়ের প্রায় ৫-৭% আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ইতিমধ্যেই চাপে থাকা মার্কিন থিয়েটার মালিকরা এতে খুশি হবেন না এবং যদি বাকি বিশ্ব পালটা ফুঁসে ওঠে তবে হলিউডও তাঁর আন্তর্জাতিক রাজস্বের একটি বড় অংশ হারাবে। প্রোডিউসারস গিল্ড অব ইন্ডিয়ার সভাপতি শিবাশিস সরকার দ্য হিন্দুকে বলেন, ‘টিকিটের দাম বাড়লে অবশ্যই ভিড়ের উপর প্রভাব পড়বে এবং এতে প্রযোজকদের অংশও হ্রাস পাবে। শুধু হলে মুক্তি পাওয়া ছবিই নয় , ডিজিটাল বা স্যাটেলাইট বা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা অন্য যে কোনও রাজস্ব বা ব্যবসা প্রভাবিত হবে, তিনি জানান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাওয়া ভারতীয় চলচ্চিত্রগুলির বৃহত্তম অংশ তেলুগু (টলিউড), তারপরে বলিউড বা হিন্দি চলচ্চিত্র এবং তারপরে তামিল, মালয়ালম, পাঞ্জাবি এবং অন্যান্য ভাষার ছবি। ‘এই ধরনের উচ্চ শুল্ক ব্যবস্থায় সিনেমা প্রদর্শন ও দেখার সব চ্যানেল প্রভাবিত হবে এবং ছবি দেখবার খরচ আরও ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে উঠবে। এটি সামগ্রিকভাবে ভারতীয় প্রবাসীদের জন্য ব্যয় বাড়িয়ে তুলবে’, জানান অ্যানিমেশন এবং ভিজ্যুয়াল এফেক্টস শিল্প বিশেষজ্ঞ আশিস কুলকার্নি। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ শ্রীধর পিল্লাই ইন্ডিয়া টুডেকে বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন: ’আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রদর্শনের জন্য ৫ কোটি টাকায় একটি ছবি কিনেছেন, তারপরে আপনাকে ১০কোটি টাকা দিতে হবে। এবং ধরুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি টিকিটের গড় মূল্য এই মুহূর্তে ১০-১৫ ডলার, যা এক ধাক্কায় ২৫-৩০ ডলারে পৌঁছে যাবে।'
আইএমডিবি অনুসারে সাম্প্রতিক ভারতীয় চলচ্চিত্রগুলি যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বড় আয় করেছে তার মধ্যে রয়েছে ‘বাহুবলী ২’, যার আয় প্রায় ২২ মিলিয়ন ডলার, তারপরে 'কল্কি ২৮৯৮ এডি', 'পাঠান', 'আরআরআর', 'পুষ্পা ২', 'জওয়ান' এবং 'অ্যানিমাল', সবগুলির আয় ১৫-১৯ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে।
চলচ্চিত্রের উপর শুল্কের অর্থ হ'ল ট্রাম্প এখন সাংস্কৃতিক শিল্পে প্রবেশ করছেন। এটি আন্তঃসীমান্ত সহ-প্রযোজনা এবং আন্তর্জাতিক বক্স-অফিস রাজস্বের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে এমন স্টুডিওগুলির জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি করবে। বিদেশে নির্মিত চলচ্চিত্রের উপর ১০০% শুল্ক আরোপ করার জন্য ট্রাম্প কী আইনি পথ বাছবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়।