সপ্তমীর দিনে নেমে এল মৃত্যুর কালো ছায়া। গোটা রাজ্য যখন দুর্গাপুজোর আনন্দে মাতোয়ারা ঠিক সেই সময় ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটে গেল মালদায়। অভিযোগ, নিজের দুই সন্তানকে শ্বাসরোধ করে খুন করে আত্মঘাতী হলেন এক মা। সোমবার সকালে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা সামনে আসতেই হতভম্ব হয়ে যান স্থানীয়রা। ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়।
আরও পড়ুন: রাহুল গান্ধীকে গুলি করার হুমকি, ABVP নেতার শাস্তির দাবি, শাহকে চিঠি কংগ্রেসের
ঘটনাটি ঘটেছে পুরাতন মালদা পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাচামারি গভর্নমেন্ট কলোনির নিচুপাড়ায়। মৃত গৃহবধূর নাম রূপালি হালদার (২৮)। তাঁর বড় ছেলে অয়ন হালদারের বয়স মাত্র সাত বছর, আর কন্যাসন্তানটির বয়স মাত্র ছ’মাস। খবর পেয়ে মালদা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনটি দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরেই রূপালি ও তাঁর স্বামী অসিত হালদারের মধ্যে পারিবারিক অশান্তি চলছিল। প্রায় তিন-চার মাস ধরে স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না, এমনকি স্ত্রী রূপালি কিছুদিন বাপেরবাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরেও কাটিয়েছিলেন। রবিবার ষষ্ঠীর রাতে ফের দম্পতির মধ্যে ঝগড়া বাঁধে। স্বামী অসিত ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরোতে চাইলে রূপালি আপত্তি জানান। সেই নিয়েই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। পরে সন্তানদের নিয়ে নিজের ঘরে চলে যান রূপালি। অসিত অন্যত্র গিয়ে ঘুমোতে থাকেন।
সোমবার সকাল দশটা গড়িয়ে গেলেও ঘুম থেকে না ওঠায় পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হয়। বারবার ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে তাঁরা দরজা ভেঙে ফেলেন। দেখা যায়, খাটের উপর নিথর অবস্থায় পড়ে রয়েছে দুই শিশুর দেহ। আর পাশেই সিলিং ফ্যানে ঝুলছে রূপালির দেহ। এই দৃশ্য দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবার-পরিজনরা। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহ তিনটি উদ্ধার করে। স্বামী অসিত হালদারকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
মৃতার শ্বশুর তরুণ হালদার জানান, রাতে ছেলেকে ঠাকুর দেখতে নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গেই বচসা হয়। তাঁর বউমা ছেলেকে বাইরে যেতে দিতে চাইছিল না। তারপর সকালে দেখেন এই ভয়ঙ্কর ঘটনা।খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শ্যাম মণ্ডলও। তিনি শোকাহত পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। উৎসবের দিনে এই মর্মান্তিক ঘটনায় স্তম্ভিত এলাকাবাসী। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রতিবেশীরা বলছেন, মা কেন এমন করলেন, তা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না তাঁরা। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, পারিবারিক অশান্তিই এই মর্মান্তিক ঘটনার নেপথ্যে। তবে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।