‘ধূমকেতু’ শুধু একটি সিনেমার নাম নয়, এই ছবি যেমন ভালোবাসার গল্প শোনায়, তেমন শোনায় বিচ্ছেদের গল্পও। তবে সিনেমার আড়ালে থেকে গিয়েছে এমন একটি মর্মান্তিক কাহিনি, যার কথা সমাজমাধ্যমের পাতায় তুলে ধরলেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। পরিচালকের পোস্ট দেখে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল নেট পাড়ার বাসিন্দাদের।
২০ আগস্ট অর্থাৎ ‘ধূমকেতু’ মুক্তির ৬ দিন পর সিনেমার একটি দৃশ্যের ছবি সমাজ মাধ্যমের পাতায় তুলে ধরেন পরিচালক। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি টেবিলে রাখা দুটি বোতল এবং দূরে অন্য একটি টেবিলে বসে থাকা দুই ব্যক্তি (স্পষ্ট নয়)। আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারটি ভীষণ সাধারন মনে হলেও এর পেছনে যে গল্প রয়েছে তা আপনাকে অবাক করবে।
আরও পড়ুন: ছেলে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়লেন পরীমণি! অসুস্থ অভিনেত্রীও, কী হল হঠাৎ?
আরও পড়ুন: বর্ষা শেষে হতে চলেছে ভূতের আগমন, হইচই- এর পর্দায় আসছে ‘ভূততেরিকি’
ছবি পোস্ট করে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় লেখেন, ‘এই ছবিটা আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । মন দিয়ে দেখুন ও লেখাটা পড়ুন। এটা ধূমকেতুর একটা দৃশ্যের শট । যেখানে নৈনিতালের একটা ক্যাফেতে দেব ও শুভশ্রীর দেখা হয়, কিন্তু শুভশ্রী চিনতে পারে না বৃদ্ধ দেবকে। লক্ষ্য করবেন টেবিলে বসে আছেন দুজন ব্যক্তি। তাঁদের সামনের টেবিলে দুটো খালি জলের বোতল রাখা। সেই দুটো বোতলের পিছনে টুপি মাথায় একজন ও উল্টোদিকে বসে হাল্কা দাড়ি মুখে আরেকজন। নিজেদের কাজে ব্যস্ত। এঁরা দুজনেই আমাদের ইউনিট মেম্বার ছিলেন নৈনিতালে।’
পরিচালক লেখেন, 'বাইরে কোথাও শ্যুটিং করতে গেলে হামেশাই ফ্রেমের প্রয়োজনে ইউনিটের সহকর্মীদের অনুরোধ করে বসতে বা হেঁটে যেতে বলা হয়। এটাও তেমনি। টুপি মাথায় যিনি তাঁর নাম সঞ্জয় ভট্টাচার্য, প্রোডাকশন ডিপার্টমেন্টের বন্ধু ও উল্টোদিকে বসা ভদ্রলোক বিখ্যাত মেকআপ আর্টিস্ট বিক্রম গায়কোয়াড়জী। ১০ বছর পর যখন ধূমকেতু মুক্তি পেয়েছে, তখন ঐ টেবিলে বসা দুজন মানুষই আর আমাদের মধ্যে নেই।অন্যান্য টেবিলে আরও অন্য ইউনিট মেম্বার ফ্রেম ভরাট করতে বসেছিলেন। কিন্তু কেন যে ঐ দুজনকেই বেছে ঐ একই টেবিলে বসিয়েছিলাম তার কোনও উত্তর পাচ্ছি না!
এবার আসল কাহিনি প্রকাশ্যে নিয়ে এলেন পরিচালক। তিনি লেখেন, ‘ছবির ফাইনাল প্রিভিউ করতে গিয়ে এটা ধরা পড়ে আমার চোখে।সত্যি গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। আরও অস্বস্তি হয় সামনে রাখা দুটো খালি জলের বোতল দেখে। ওটা রূপক নাকি কাকতালীয়! আমরা তো আমাদের দৃশ্য সাজিয়েছিলাম আমাদের সিনেমার জন্য! কিন্তু অলক্ষ্যে কেউ কি টেবিল সাজিয়ে নিয়েছিলেন তাঁর নিজের চিত্রনাট্য অনুযায়ী! নইলে ঐ একই টেবিলে বসা দুজনেই আজ কেন নেই আমাদের মধ্যে? দুটো খালি বোতল কেন ওখানেই রাখা?’
সবশেষে পরিচালক বলেন, ‘যতদিন সিনেমা বানাবো, এই ফ্রেমটা তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াবে। কাহিনী বলতে আমরা ঠাকুরমার ঝুলি থেকে যে কাঠামো চিনে এসেছি, তার বাইরেও প্রতিটা মুহূর্তও গল্প বলতে থাকে, প্রতিটা সাধারণ পরিস্থিতিও গল্প বলতে থাকে। কেউ বুঝতে পারে, কেউ টেরই পায় না। ধূমকেতুর প্রতিটা শোয়ে চিরকাল তোমাদের মিস করব বিক্রমজী ও সঞ্জয়। প্রণাম।’
আরও পড়ুন: কবিতার পর এবার গান, ‘বকুলতলায় ভিড় জমেছে’ গানের সুরে লিপ মেলালেন ‘পরিণীতা’- র বিদ্যা
আরও পড়ুন: 'আমায় লুকিয়ে বিয়ে...', রাজেশ খান্নাকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য অনিতা আডবানির
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের পোস্ট দেখে রীতিমতো স্তম্ভিত নেটিজেনরা। কেউ কেউ লিখেছেন, সত্যি আমাদের অন্তরালে দাঁড়িয়ে একজন গল্প লিখছেন, সেই গল্পের আমরা কিছুই জানি না। অন্য একজন লিখেছেন, এই ফ্রেম চিরকাল মনে থাকে যাবে। কেউ কেউ গোটা ব্যাপারটাকে রহস্যময় বলে অভিহিত করেছেন, কেউ আবার লিখেছেন, এটা এমন একটা অনুভূতি যার কথা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।