‘ফেলুদা’ বা ‘ব্যোমকেশ’-এর মতো বাংলা সাহিত্যের গোয়েন্দার গণ্ডি ছাড়িয়ে বাংলা ছবিতে দেখা মিলবে 'শার্লক হোমস'-এর থুড়ি ‘সরলাক্ষ’-এর! যদিও এ খবর নতুন কিছু নয়। সরলাক্ষ যে আসছে তার টিজার ট্রেলার ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। ২৯ অগস্ট থেকে বড় পর্দাতেও তার দেখা মিলবে। কিন্তু সরলাক্ষ রূপে যাঁকে দেখা যাবে অর্থাৎ ঋষভ বসু, এই কাজ করতে গিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা ঠিক কেমন হল। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে ভাগ করে নিলেন নায়ক।
‘ফেলুদা’ বা ‘ব্যোমকেশ’ ছেড়ে 'শার্লক হোমস'কে বাংলায় আনায় ভাবনাটা কীভাবে এল? প্রশ্নে নায়ক বলেন, 'এই সিদ্ধান্তটা নির্মাতা ও পরিচালকের। ওঁরা ভেবেছিলেন বাংলায় শার্লককে আনবেন। আর ঘটনা চক্রে ওঁরা এই চরিত্রের জন্য আমাকে বেছে নেন। এদিকে, আমি আগে শার্লক নিয়ে রিসার্চ করেছি, কিন্তু এটা আবার ওঁরা জানতেন না। তাই এটা কোথাও গিয়ে ম্যানিফেস্টেশনের মতো আমার মনে হয় কাজ করেছে। সেই সময় এই চরিত্র নিয়ে যে পড়াশোনাটা করেছিলাম, কাজটা করতে গিয়ে সেটা থেকে অনেকটা সুবিধা পেয়েছি।'
তবে পড়াশোনার পাশাপাশি 'শার্লক'কে নিয়ে অনেক ছবি হয়েছে। সেখানে হেনরি ক্যাভিল, রবার্ট ডাউনি জুনিয়র, বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচের মতো অভিনেতাদের দেখা গিয়েছে। ফলে নায়ক চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে কি রেফারেন্স হিসেবে তাঁদের সেই সব ছবি দেখেছেন? এই প্রশ্নে ঋষভ বলেন, 'আসলে আমি যখন রিসার্চ করেছিলাম তখন আমার ইচ্ছেটা এসে ছিল বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচের শার্লক সিরিজ দেখেই। আমার রিসার্চ পেপারটা ওই সিরিজটাকে কেন্দ্র করে ছিল, তার সঙ্গে বিশ্ব সাহিত্যে শার্লকের প্রভাব বা ফ্যান ফিকশনের মতো জায়গাগুলো এসেছে।' ফলে সব মিলিয়ে এই চরিত্র যে নায়িকের বেশ কাঙ্খিত চরিত্রগুলির মধ্যে একটি তা বলাই বাহুল্য।
কিন্তু কাজের শেষে 'সরলাক্ষ' কী দিয়ে গেল নায়ককে? তাঁর কথায়, 'সরলাক্ষ আমার কেরিয়ারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ছবি। কারণ এতদিন পর্যন্ত আমি যে ধরনের ছবি ও সিরিজে মূলত কাজ করে এসেছি সবই প্রায় রোম্যান্টিক ধরনের। আর সেটা হয়ও। কোনও এক অভিনেতাকে কোনও বিশেষ ধরনের চরিত্রে ভালো লেগে গেলে তিনি সেই চরিত্রে জন্যই বার বার নির্বাচিত হন। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। রোম্যান্টিক হিরো হিসেবে অনেক ধরনের কাজ পেলেও, আমি অ্যাকশন ছবির খুব ভক্ত। আমি নিজেও অ্যাকশন ধর্মী ছবিই করতে চাইতাম। আর এই ছবিটাই আমার প্রথম অ্যাকশন ধর্মী ছবি হতে চলেছে। তাই সেই জায়গা থেকে সরলাক্ষ আমার কাছে খুব বিশেষ।'
তবে পর্দার সরলাক্ষর মতো বাস্তবে কি ঋষভ কখন গোয়েন্দাগিরি করেছন? প্রশ্নে নায়ক বলেন, 'হ্যাঁ অবশ্যই ছোটবেলায় ফেলুদা, তারপর ব্যোমকেশ, শার্লক এই সব যখনই পড়তাম, তখনই ভাবতাম যে আমি যদি গোয়েন্দা হতে পারি, বা আমারও যদি ওঁদের মতো প্রাইভেট ডিটেকটিভ এজেন্সি থাকত তাহলে আমিও ওরকম কালো চশমা পরে, কোট পরে, ক্রিমিনালদের ধাওয়া করতাম, কেস স্লভ করতাম। পাশাপাশি জীবনেও অনেক রহস্য থাকে যা আমরা সমাধান করতে পারি না। তখন মনে হয় সত্যি শার্লকের মতো যদি আমার মস্তিস্ক যদি একটু ক্ষুরধার হত।' তবে বাস্তবে গোয়েন্দা না হলেও পর্দায় পুরোদস্তুর গোয়েন্দা হয়ে তিনি আসছেন।
আর সঙ্গে অর্ণ মুখোপাধ্যায় শার্লকের ওয়াটশন অর্থাৎ সরলাক্ষর 'আর্য সেন' হিসেবে থাকবেন। ফলে তাঁর সঙ্গে ঋষভের রসায়নটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেই প্রসঙ্গে নায়ক বলেন, 'অর্ণদার সঙ্গে আমার অনেক দিনের পরিচয়। আমরা এক সঙ্গে থিয়েটার করেছি। তাই এই চরিত্রগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে নিজেদের মধ্যে। আমাদের পরিচালক সায়ন্তনদার সঙ্গে বসেও আলোচনা করেছি। সবাই তো জুটি নিয়ে কথা বলেন। এই ছবিতে আমার আর অর্ণদার যে রসায়নটা দেখানো হয়েছে সেটা আশাকরি দর্শকরা খুব উপভোগ করবেন।'
তবে তাঁদের এই কাজ বাংলা জন্য বেশ এক্সপেরিমেন্টাল। কিন্তু কেবল এই কাজই নয়, নায়কের প্রতিটি কাজই বেশ ভিন্ন স্বাদের হয়, সঙ্গে তাঁর চরিত্রগুলিও। সে জায়গা থেকে বাণিজ্যিক সাফল্য কি তাঁকে কখন ভাবায়? প্রশ্নে তিনি বলেন,' সেটা ভাবা আমার কাজ নয়। আমার কাজ সততার সঙ্গে অভিনয়টা করা। সেটাই করে যাই। কিন্তু ছবি যদি বাণিজ্যিক ভাবে সফল হয়, অনেক বেশি সংখ্যক দর্শকদের কাছে পৌঁছে যায় তার থেকে ভালো আর কী হতে পারে? আসলে আমি বুম্বাদা, দেবদা, জিৎদাদের দেখে বড় হয়েছি। ফলে আমারও মাথার মধ্যে কোথাও চলত ওঁদের মতো হতে চাই। সব ধরনের দর্শকদের কাছে পৌঁছে যেতে চাই। আমি চাই শুধু শহর নয়, বরং গ্রামবাংলার মানুষও আমার কাজ দেখুন।'