দূরপাল্লার ট্রেনে এসি কামরার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব যাঁদের কাঁধে, সেই ঠিকা শ্রমিকরা এবার সরাসরি রেলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুললেন। অভিযোগ, প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টার টানা যাত্রাপথে কাজ করলেও তাঁদের মজুরি দেওয়া হয় মাত্র আট ঘণ্টার। বাকি সময় কার্যত বিনা পারিশ্রমিকে রেলের কাজেই কাটাতে হয়। এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে সম্প্রতি অ্যাসিস্ট্যান্ট লেবার কমিশনের দফতরে মামলা করেছে সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়ে কনট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়ন।
আরও পড়ুন: দুর্ঘটনা রুখতে পদক্ষেপ রেলের, শিয়ালদা ডিভিশনে ৩১স্টেশনে উঁচু করা হল প্ল্যাটফর্ম
তদন্তের অংশ হিসেবে কলকাতার নিজাম প্যালেসে একাধিক শুনানি ইতিমধ্যেই হয়েছে। কমিশন রেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে, শ্রমিকদের অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে হবে। ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেই অবস্থান জানাতে হবে রেলকে। কমিশনের স্পষ্ট প্রশ্ন শ্রম আইন ভেঙে কীভাবে মাত্র আট ঘণ্টার মজুরিতে ২৪ ঘণ্টার কাজ করানো হচ্ছে? শ্রমিকদের অভিযোগ আরও বিস্তৃত। শুধু ওভারটাইম বঞ্চনাই নয়, যাত্রীদের কেউ যদি ১৩৯ নম্বরে একটি অভিযোগও জানান, তবে সংশ্লিষ্ট কর্মীকে ১০ থেকে ১৫ দিনের জন্য সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়। এ কারণে অনেক শ্রমিকের মাস শেষে হাতে আসে মাত্র ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। ইউনিয়নের সম্পাদক শেখ নাসিরুদ্দিন জানান, একজন শ্রমিককে দিনে ৩০০-৩৫০ টাকার বিনিময়ে ২৪ ঘণ্টা খাটানো হচ্ছে। উপরন্তু অনেকেরই পিএফ, ইএসআই জমা হয় না। নির্ধারিত মজুরির অর্ধেকও পান না। এই অভিযোগে ইতিমধ্যেই শোরগোল শুরু হয়েছে। এক সময় যেখানে একই কাজ করতেন রেলের স্থায়ী কর্মীরা, এখন সম্পূর্ণ পরিষেবা তুলে দেওয়া হয়েছে বেসরকারি হাতে। এর পর থেকেই অভিযোগ বাড়ছে বঞ্চনা ও অমানবিক পরিশ্রমের।
বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলছে, শ্রম কোডে এখনও ১২ ঘণ্টা কাজের প্রস্তাব রাখা হলেও রেল তার আগেই ২৪ ঘণ্টা খাটিয়ে রেকর্ড গড়ছে। অন্যদিকে, সাউথ ইস্টার্ন রেলের জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, বিষয়টি তাদের আইনি শাখা দেখছে। কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।