দুরন্ত টেস্ট সিরিজ। কখনও ইংল্যান্ড এগিয়েছে। আবার ভারতও কামব্যাক করেছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সদ্য সমাপ্ত অ্যান্ডারসন-তেন্ডুলকর ট্রফি সিরিজে ভারতের অধিনায়ক শুভমন গিল ব্যাট হাতে ঝড় তুললেও, সিরিজ সেরার পুরস্কার নিয়ে উঠে এল নতুন এক নেপথ্য ঘটনা।
ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার পেয়েছেন দু’জন। ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজের নয়া নিয়ম হল প্রতিপক্ষ কোচ সিদ্ধান্ত নেন বিপক্ষের কাকে সেরার পুরস্কার দেওয়া হবে। ব্রুকের নাম জানিয়েছেন গৌতম গম্ভীর। অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালাম প্রথমে গিলের নাম প্রস্তাব করলেও শেষদিনের উত্তেজনায় মোড় ঘোরায় নাটকীয়ভাবে। আর এই তথ্য ফাঁস করেছেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং বর্তমান জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার দীনেশ কার্তিক।
‘ক্রিকবাজ’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দীনেশ কার্তিক জানান, প্রথমে শুভমনের নাম ভাবলেও পরে সিদ্ধান্ত বদলেছিলেন ম্যাকালাম। কিন্তু ততক্ষণে আর কিছু করা যায়নি। কার্তিক বলেন, 'ম্যাচ যদি চতুর্থ দিন শেষ হয়ে যেত তা হলে শুভমনই সিরিজ সেরা হত। চতুর্থ দিনের পর শুভমনের নামই জানিয়েছিলেন ম্যাকালাম। সেই মতো মাইকেল আথারটন সব প্রশ্ন তৈরিও করে ফেলেছিলেন। কারণ, ওঁকেই সব প্রশ্ন করতে হত। চতুর্থ দিন শুভমনই পছন্দ ছিলেন ম্যাকালামের।' কিন্তু পঞ্চম দিনে সব হিসেব ওলটপালট করে দেন মহম্মদ সিরাজ। মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্যেই তিনি নিজের স্পেল দিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন ভারতের পক্ষে।ইংল্যান্ডের জিততে দরকার ছিল ৩৫ রান। এদিকে, ভারতের দরকার ছিল ৪ উইকেট।সেই ৪ উইকেটের মধ্যে সিরাজ একাই ৩ উইকেট নেন। ইনিংসে ৫ ও ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে ভারতকে জেতান তিনি। তারপরেই সিদ্ধান্ত বদলেছিলেন ম্যাকালাম।
প্রাক্তন ক্রিকেটার দীনেশ কার্তিক বলেন, 'পঞ্চম দিন ৪০ মিনিট খেলা হওয়ার পর সিদ্ধান্ত বদলান ম্যাকালাম। তিনি সিরাজের নাম বলেন। কিন্তু ততক্ষণে আথারটন তৈরি হয়ে গিয়েছেন। তাই আর সিদ্ধান্ত বদলানো যায়নি। বাধ্য হয়ে শুভমনকেই পুরস্কার দেওয়া হয়। সেই কারণেই পরে সিরাজের প্রশংসা করেছেন ম্যাকালাম।' ওভালের ঐতিহাসিক টেস্টের পঞ্চম দিনে ইংল্যান্ড মাত্র ৬ রানে হেরে যায়।এই ম্যাচের শেষ ইনিংসে সিরাজ ১০ উইকেটের মধ্যে পাঁচটি তুলে নেন, আর তাতেই ভারতের জয় নিশ্চিত হয়। ব্রেন্ডন ম্যাকালাম সিরাজের এই পারফরম্যান্সের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, 'সিরাজের হাতে বল মানেই প্রচণ্ড এনার্জি। ওর মধ্যে ফাস্ট বোলারদের জন্য প্রয়োজনীয় আত্মা রয়েছে। আজকের স্পেলটা সত্যিই সিরিজের ভাগ্য বদলে দিল।'
ভারত ও ইংল্যান্ড দু’দল মিলিয়ে সিরাজই একমাত্র বোলার যিনি পাঁচটা টেস্টই খেলেছেন। ন’টা ইনিংসে মোট ১৮৫.৩ ওভার অর্থাৎ, ১১১৩ বল করেছেন তিনি। বাকি কোনও বোলার ৯০০ বলও করেননি। সিরিজে সবচেয়ে বেশি ২৩ উইকেট নিয়েছেন সিরাজ। প্রতিটা স্পেলে সমান উদ্যমে বল করেছেন তিনি। শেষ যে বলে তিনি গাস অ্যাটকিনসনকে আউট করেছেন সেই বলের গতি ছিল ঘণ্টায় ১৪৩.৫ কিলোমিটার। সিরাজের এই পরিশ্রমে মুগ্ধ হয়েছেন ম্যাকালাম।শেষ পর্যন্ত সিরিজ সেরা হয়েছেন শুভমন গিল, কিন্তু সিরিজের শেষ মুহূর্তে মহম্মদ সিরাজের আগুন ঝরানো স্পেল ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে গেঁথে থাকবে বহুদিন। আর এই ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করে দিল, নতুন প্রজন্মের ভারতীয় ক্রিকেটাররা শুধু প্রতিভায় নয়। মনের জোরেও বিশ্বমঞ্চে বড় খেলোয়াড় হয়ে উঠছেন।