রাহুল দ্রাবিড়ের পর ভারতীয় টেস্ট দলের 'দেওয়াল' হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সেই চেতেশ্বর পূজারা অবসর গ্রহণ করলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে ভারতের হয়ে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা করেছেন চেতেশ্বর পূজারা। চেতেশ্বর পূজারা শেষবার ২০২৩ সালে ভারতের হয়ে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন। সেটি ছিল বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩-এর ফাইনাল।
ডানহাতি ব্যাটসম্যান চেতেশ্বর পূজারা সোশ্যাল মিডিয়ায় অবসরের ঘোষণা করে লিখেছেন, 'ভারতের জার্সি গায়ে দেওয়া, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া এবং প্রতিবার মাঠে নামার সময় নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করা - এর আসল অর্থ ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। তবে যেমনটা বলা হয়, প্রতিটি ভালো জিনিসেরই একটি অন্ত আছে এবং সেটাই ঘটেছে। কৃতজ্ঞতার সঙ্গে আমি সব ধরনের ভারতীয় ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপনাদের ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ।'
২০১০ সালে ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল চেতেশ্বর পূজারার। তারপর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১০৩টি টেস্ট ও মাত্র ৫টি ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। ৫টি ওডিআই ম্যাচে তিনি করেছিলেন মাত্র ১৫ রান। ২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত খেলেছেন এই ফরম্যাটে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কখনো সুযোগ পাননি তিনি। অন্যদিকে চেতেশ্বর পূজারা ১০৩ টেস্টে ১৯টি সেঞ্চুরি, ৩৫টি হাফ সেঞ্চুরি ও ৩টি ডাবল সেঞ্চুরিসহ ৭১৯৫ রান করেছেন। টেস্টে তাঁর গড় ছিল ৪৩-এর ওপরে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চেতেশ্বর পূজারাকে ভারতের টেস্ট দলের মেরুদণ্ড বলা হত এবং বহুবার তিনি ভারতীয় দলকে কঠিন পরিস্থিতি থেকে ফিরিয়ে এনেছিলেন। পূজারা প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে ৬৬টি সেঞ্চুরি এবং ৮১টি হাফসেঞ্চুরি সহ ২৭৮ ম্যাচে মোট ২১৩০১ রান করেছেন। তাঁর সেরা স্কোর ৩৫২। তিনি লিস্ট এ ক্রিকেটে ১৩০ টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন এবং এই ফর্ম্যাটে তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে ৫৭৫৯ রান করেছেন। লিস্ট এ-তে ব্যাট হাতে তাঁর নামে রয়েছে ১৬টি সেঞ্চুরি ও ৩৪টি হাফসেঞ্চুরি। আইপিএলে ৩০টি ম্যাচে তিনি করেছিলেন মাত্র ৩৯০ রান। তাতে ছিল একটি হাফসেঞ্চুরি।
৩৭ বছর বয়সি চেতেশ্বর পূজারা তাঁর অবসরের নোটে লিখেছেন, 'রাজকোটের একটি ছোট শহর থেকে ছোটবেলায় আমি তারকাদের স্পর্শ করার এবং ভারতীয় ক্রিকেট দলের অংশ হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমার বাবা-মায়ের সাথে সেই স্বপ্ন নিয়ে এই স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমি তখন কল্পনাও করতে পারিনি যে এই খেলাটি আমাকে অনেক কিছু দেবে - অমূল্য সুযোগ, অভিজ্ঞতা, উদ্দেশ্য, ভালোবাসা এবং সর্বোপরি আমার দেশ এবং এই মহান জাতির প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ। ভারতের জার্সি গায়ে দেওয়া, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া এবং প্রতিবার মাঠে নিজের সমস্তটা দিয়ে পরিশ্রম করা - এটি ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। তবে যেমনটা বলা হয়, প্রতিটি ভালো জিনিসেরই অন্ত আছে এবং সেটাই ঘটছে। সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমি সব ধরনের ভারতীয় ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি বিসিসিআই এবং সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের কাছে চিরকৃতজ্ঞ আমাকে আমাকে সুযোগ দেওয়ার জন্য এবং সমর্থন করার জন্য। আমি যে সব দল, ফ্র্যাঞ্চাইজি ও কাউন্টির অংশ ছিলাম তাদের প্রতিও সমানভাবে কৃতজ্ঞ। আমার গাইড, কোচ এবং আধ্যাত্মিক গুরুদের অমূল্য দিকনির্দেশনা ছাড়া আমি এতদূর পৌঁছাতে পারতাম না। তাঁদের কাছে আমি চিরদিন ঋণী থাকব। আমার সমস্ত সতীর্থ, সাপোর্ট স্টাফ, নেট বোলার, বিশ্লেষক, লজিস্টিক দল, আম্পায়ার, গ্রাউন্ড স্টাফ, স্কোরার, মিডিয়া কর্মী এবং অন্য সকলকে একটি বড় ধন্যবাদ যারা পর্দার পিছনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে এবং আমাদের এই খেলাটি খেলতে সক্ষম করে। আমি আমার স্পন্সর, পার্টনার ও ম্যানেজমেন্ট টিমের প্রতিও কৃতজ্ঞ, যারা বছরের পর বছর ধরে আমার ওপর আস্থা রেখেছে এবং মাঠের বাইরের কার্যক্রমের যত্ন নিয়েছে। এই গেমটি আমাকে সারা বিশ্ব জুড়ে নিয়ে গেছে - এবং সর্বত্র দর্শকদের উত্সাহী সমর্থন এবং শক্তি সর্বদা আমার সাথে রয়েছে। আমি যে ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছা পেয়েছি তাতে আমি অভিভূত এবং এর জন্য চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকব। এবং অবশ্যই, এর কোনওটিই সম্ভব এবং অর্থবহ হত না যদি না আমার পরিবার - আমার বাবা-মা, আমার স্ত্রী পূজা, আমার মেয়ে অদিতি, আমার শ্বশুর-শাশুড়ি এবং আমার পুরো বর্ধিত পরিবার আমার পাশে থাকত- যারা এই যাত্রাটিকে সত্যই স্মরণীয় এবং অর্থবহ করে তুলেছিল। এখন আমি আমার জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ের দিকে তাকিয়ে আছি, যেখানে আমি তাঁদের সাথে আরও বেশি সময় ব্যয় করব এবং তাদের অগ্রাধিকার দেব।'