প্রবল বর্ষণ, সঙ্গে বন্যা-সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত পাঞ্জাবের তরন তারন জেলায় বিস্তীর্ণ এলাকা।রাজ্যের প্রধান জলাধারগুলি ভাকরা, পং, রঞ্জিত সাগর ও শাহপুর কান্ডি ড্যাম—তাদের সর্বোচ্চ অনুমোদিত জলস্তরের কাছাকাছি কিংবা তা ছাড়িয়েছে। আশ্রয় হারিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এই আবহে তরন তারন জেলার বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন রাজ্যের তিন মন্ত্রী। সহানুভূতি-আবেগ তো দূরের কথা, বন্যায় প্লাবিত একের পর এক গ্রাম ঘুরতে ঘুরতে মন্ত্রীদের মনে পড়ে গেল বিদেশে সমুদ্র সৈকত ভ্রমণের সোনালী স্মৃতি।আর এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই বিতর্কে জড়িয়েছে পাঞ্জাবের আম আদমি পার্টির সরকার।
পাঞ্জাবের মন্ত্রী লালজিৎ সিং ভুল্লারের ফেসবুক হ্যান্ডেলে লাইভ স্ট্রিম করা হয়েছিল ভিডিওটি। তাতে দেখা গিয়েছে, বন্যার জলের উপর দিয়ে একটি স্পিডবোট নিয়ে যাচ্ছেন মন্ত্রী লালজিৎ সিং ভুল্লার, হরভজন সিং এবং বারিন্দর কুমার গোয়েল। পাঞ্জাবের সীমান্তবর্তী জেলাগুলির বন্যা ত্রাণের তিন ইনচার্জ। তিন জনেরই গায়ে রয়েছে লাইফ জ্যাকেট। স্পিডবোটে বসে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার পরিবর্তে বিদেশ ভ্রমণের মধুর স্মৃতিচারণ করছেন তিন মন্ত্রী।মন্ত্রী হরভজন সিংকে সুইডেনে ক্রুজ শিপে ভ্রমণ এবং গোয়ায় ছুটি কাটানোর গল্প করতে শোনা গিয়েছে। তিনি বলেন, 'আমি সুইডেনে গিয়েছিলাম এবং ২৪ ঘন্টা ক্রুজে ভ্রমণ করেছি।' এরপরেই ভুল্লারের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আরও একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। সেখানে তাঁরা জনগণকে বন্যা নিয়ে সরকারি নির্দেশাবলী অনুসরণ করার এবং নিরাপদ এলাকায় সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, এই ভিডিও ভাইরাল হতেই ভগবন্ত মান সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন পাঞ্জাব বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস নেতা প্রতাপ সিং বাজওয়া। তিনি বলেন, ‘পাঞ্জাবের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি এক গ্লাস পানীয় জলের জন্য ভিক্ষা করছে, কিন্তু আপের মন্ত্রীরা সুইডেন ও গোয়ায় বিলাসবহুল ক্রুজের সোনালী স্মৃতিতে ডুবে থাকার জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছেন। কী অসাধারণ ত্রাণ সফর!’ নেটিজেনরাও এই ঘটনায় সরব হয়েছেন। এক্স বার্তায় একজন লেখেন, 'যারা কেবল বেঁচে থাকার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে, তাদের বিনিময়ে ক্রুজ ভ্রমণ উপভোগ করা। কী নির্লজ্জ মানুষ, ভুলে গেছে যে তারা জনগণের সেবা করার জন্য নির্বাচিত হয়েছে।'
পাঞ্জাবে বন্যা
টানা বৃষ্টির ফলে পাঞ্জাবজুড়ে বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নিয়েছে।বলা হচ্ছে ১৯৮৮ সালের পর থেকে পাঞ্জাবে এত ভয়াবহ বন্যা আর হয়নি।সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পাঠানকোট, গুরুদাসপুর, ফাজিলকা, কপুরথলা, তরন তারন, ফিরোজপুর, হোশিয়ারপুর এবং অমৃতসর জেলায়। নিচু এলাকা থেকে মানুষকে সরানো এবং বিপদাপন্ন বাঁধগুলিতে বালির বস্তা বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। নদীতীরবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের উঁচু স্থানে চলে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে এবং নদীর ব্রিজের আশেপাশে অপ্রয়োজনীয় চলাচল থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।এনডিআরএফ, সেনা ও অন্যান্য সংস্থার যৌথ উদ্ধার অভিযান চলছে।ইতিমধ্যে পাঞ্জাবের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে ৬,৬০০ জনেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।বৃহস্পতিবারই পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবংজেলা প্রশাসনকে ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন।