ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে মধ্যস্থতা করতে না দেওয়ায় 'ব্যক্তিগত আক্রোশে' নয়া দিল্লির উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক রিপোর্টে দাবি করেছে মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক পরিষেবা সংস্থা জেফরিস।রাশিয়ার থেকে তেল কেনার জন্য ভারতের ‘শুল্ক শাস্তি’ চাপিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ হারে শুল্ক আদায় করছে মার্কিন সরকার। কিন্তু মার্কিন সংস্থা দাবি করেছে, শুধু রাশিয়া সঙ্গে সখ্যতা নয়, শুল্ক আরোপের নেপথ্যে রয়েছে ভারতের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ক্ষোভ।
জেফরিসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের উপর শুল্ক আরোপ মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্টের 'ব্যক্তিগত আক্রোশের' ফল।কারণ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘর্ষে ইতি টানতে তাঁকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে দেওয়া হয়নি। ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কখনও তৃতীয় পক্ষকে হস্তক্ষেপ করতে দেয়নি এবং ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার অর্থনৈতিক মূল্য সত্ত্বেও এটি একটি রেড লাইন হিসেবে রয়ে গেছে।' প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কৃষি ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মধ্যে আরেকটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান নরেন্দ্র মোদী-সহ কোনও ভারত সরকারই কৃষি খাত আমদানির জন্য উন্মুক্ত করতে ইচ্ছুক নয়। কারণ, এর ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
অপারেশন সিঁদুর
গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরণ উপত্যকায় নিরীহ পর্যটকদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায় জঙ্গিরা। ২৬ জন নিরীহের প্রাণ যায়। এর পাল্টা গত ৭মে 'অপারেশন সিঁদুর' চালিয়ে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী। এরপর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়।ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির জনবহুল এলাকা এবং সেনাঘাঁটিকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় পাকিস্তান। সেই হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি প্রত্যাঘাত করে ভারত। তাতেই তছনছ হয়ে যায় পাকিস্তানের অন্তত ১১টি একধিক বায়ু সেনাঘাঁটি। ভারতীয় সেনার অভিযানে নিহত হয় ১০০ জনের বেশি জঙ্গি ও ৩৫-৪০ জন পাক সেনা। শেষ পর্যন্ত ১০ মে ইসলামাবাদের আর্জিতে সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয় নয়া দিল্লি।
কিন্তু ট্রাম্প দাবি করেন, ভারত–পাকিস্তান সংঘাত পারমাণবিক যুদ্ধে পরিণত হচ্ছিল। তিনিই ব্যবসার লোভ দেখিয়ে তা থামিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ভারত-পাকিস্তান দুই পক্ষই তাঁর প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল বলেও জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।ভারতের সরকারি অবস্থান অবশ্য একেবারেই আলাদা। দিল্লি স্পষ্ট জানিয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত হয়েছিল দুই দেশের ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশন্স-র সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে। কোনও বিদেশি শক্তির মধ্যস্থতা হয়নি বলেই ভারতের দাবি।যদিও ট্রাম্প তাঁর মন্তব্যে অনড়।
ভারতের উপর শুল্ক আরোপ
ভারতের উপর প্রথমে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে তিনি জানান, রাশিয়ার কাছ থেকে লাগাতার তেল কেনার কারণে ভারতকে ‘জরিমানা’ দিতে হবে। পরে শাস্তি হিসাবে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয় ভারতের পণ্যের উপর। ফলে মোট রফতানি শুল্কের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। এই বিপুল শুল্কের কারণে বাণিজ্য ধাক্কা খাচ্ছে। বাতিল হয়ে যাচ্ছে বহু পণ্যের বরাত।