ভোটমুখী বিহারে ক্রমশ চড়ছে রাজনীতির পারদ। এই আবহে বিহারে ইন্ডিয়া জোটের মঞ্চ থেকেই দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর মা'কে নিয়ে কুকথার অভিযোগ উঠেছে।আর এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, 'কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দেশে ঘৃণার রাজনীতি শুরু করেছেন।'সম্প্রতি দ্বারভাঙ্গা জেলার ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরেই বিজেপির তোপের মুখে পড়েছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা। কংগ্রেসকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবিও জানিয়েছে গেরুয়া শিবির।
শুক্রবার অসমের এক অনুষ্ঠানে অমিত শাহ বলেন, 'কংগ্রেস নেতারা 'ঘুসপেটিয়া বাঁচাও যাত্রা'র সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মায়ের বিরুদ্ধে অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করে সবচেয়ে নিন্দনীয় কাজ করেছেন। আমি এর নিন্দা জানাই...আমি জনগণকে বলতে চাই যে রাহুল গান্ধী যে ধরণের ঘৃণার রাজনীতি শুরু করেছেন তা আমাদের জনজীবনকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।' তিনি আরও বলেন, 'এটি প্রথমবার ঘটছে না। সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, মণিশঙ্কর আইয়ার, দিগ্বিজয় সিং, জয়রাম রমেশ, রেণুকা চৌধুরী-কংগ্রেসের প্রত্যেক নেতাই প্রধানমন্ত্রী মোদীর নামে অবমাননাকর ভাষা ব্যবহার করেছেন। কংগ্রেস নেতারা কী মনে করেন? আপনি কি এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করে নির্বাচন জিতবেন?' ইতিমধ্যেই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও এই ঘটনার নিন্দা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, 'প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর প্রয়াত মাকে নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করা অনুচিত। আমি এর তীব্র নিন্দা করছি।'
অন্যদিকে দ্বারভাঙ্গা পুলিশ জানিয়েছে, নির্বাচনমুখী বিহারে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর 'ভোটাধিকার যাত্রা' চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর মা' কে কুকথার জন্য এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছে, উক্ত মামলায়, সিমরি থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে আদালতে তোলা হবে বলেও জানানো হয়েছে। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর প্রয়াত মাকে নিয়ে অশালীন মন্তব্যের জেরে শুক্রবার পাটনার রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে সামিল বিজেপি। পাল্টা কংগ্রেস কর্মীরাও মাঠে নামতেই দুই শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, দুই দলের কর্মীরা দলীয় পতাকা দিয়েই একে অপরকে মারছেন। বিজেপি নেতা নীতিন নবীন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, 'মায়ের অপমানের বদলা বিহারের প্রতিটি ছেলে কংগ্রেসকে দেবে। এর জবাব আমরা অবশ্যই নেব।' পাল্টা জবাবে কংগ্রেসের অশুতোষের অভিযোগ করেন, 'ঘটনায় সরকারেরই মদত রয়েছে। নীতীশ কুমার ভুল করছেন। আমরাও জবাব দেব।'
কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া
কংগ্রেস নেতা পবন খেরা দাবি করেছেন, বিজেপি আসল ইস্যু থেকে নজর ঘোরাতেই এই ধরনের ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বিতর্ক তুলছে। তিনি বলেন, 'ওই মন্তব্য তাদের (বিজেপির) নিজস্ব এজেন্টই করেছে। তারা কেবল একটি সমস্যা তৈরি করতে চায়, যাতে আমাদের যাত্রা থেকে মনোযোগ সরাতে পারে। তাদের চুরি ধরা পড়ে গিয়েছে, তাই এই লোকেরা হতাশ। খুঁজে বের করুন যে কে সেই ব্যক্তি যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সে কার লোক... জনগণ সবকিছু দেখছে, এবং পুরো দেশ বিজেপির গুন্ডামির সাক্ষী।' অন্যদিকে, কংগ্রেসের মুখপাত্র অসিত নাথ তিওয়ারি দাবি করেছেন, বিজেপিই বরাবর কটূক্তির রাজনীতি করে। তাঁর কথায়, 'মানুষ এখন এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ছে। তবু আমরা চেষ্টা করি, যেন সভায় কেউ অশোভন মন্তব্য না করে।' সিনিয়র কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং বলেন, 'কংগ্রেসের কোনও ব্যক্তিই চাইবেন না যে প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে অবমাননাকর কথা বলা হোক। এটা কংগ্রেসের সংস্কৃতি নয়...। '
ঘটনার সূত্রপাত
উত্তেজনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে আসা একটি ভিডিও ঘিরে।‘ভোটচুরি’র অভিযোগে বিহারে দীর্ঘ ১৩০০ কিলোমিটার ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ শুরু করেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। অভিযোগ, ‘ভোটার অধিকারের যাত্রা’ চলাকালীন দরভাঙ্গায় জেলার কংগ্রেসের পতাকা গায়ে জড়ানো এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর মা'কে উদ্দেশ করে অশ্লীল মন্তব্য করেন। ওই ভিডিও ভাইরাল হতেই বিজেপি থানায় এফআইআর দায়ের করে এবং কংগ্রেসের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানায়।যদিও ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা।